• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ষোড়শ সংশোধনী বিষয়ে আপিলের রায় যেকোনো দিন


আদালত প্রতিবেদক জুন ১, ২০১৭, ০২:৪২ পিএম
ষোড়শ সংশোধনী বিষয়ে আপিলের রায় যেকোনো দিন

ঢাকা: উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে রেখে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানি শেষ করা হয়েছে। আগামী যেকোনো দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

আজ বৃহস্পতিবার ১১ দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির শেষ দিন রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। রিটকারীদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারপতিরা নিজেদের বিচার নিজেরাই করতে পারে না। সুপ্রিমকোর্ট জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ক্ষমতা না রেখে সঙসদের হাতে ক্ষমতা দেয়া উচিত।  আদালতে মুরাদ রেজা বলে, আইনটি আমদের সামেনই অঅসে নাই ।আগেই যদি এ আইন নিয়ে বিচারপতিরা ভয় পান । তাহলে তো হবেনা। আইনটি পাশ হওয়া আগেই এটি বাতিল করা ঠিক হয়নি। হাইকোর্ট আইনটি না দেখেই বাতিল করেছে এটি ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, বিচারকরা শপথ নিয়েছেন ভয়ের উর্দ্ধে থাকবেন।কিন্তু বিচারপতিরা এ আইনের কথা শুনেই ভয় পেয়েছেন । এজন্য তারা তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন।

রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবেনা।সংসদের হাতে তিনি বিচারপতিদের অপসারনের ক্ষমতা ছেড়ে দিলে সংসদ্যরা যদি তাদের বেতন ভাতা সুযোগ সুবিধা ঠিক মতো না দেয় তাহলে কিভাবে স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা থাকবে?

শুনানিতে আদালতকে আইনী সহায়তা করতে সুপ্রিম কোর্টের ১২জন জেষ্ঠ্য আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ১০জন তাদের মতামত উপস্থাপন করেছেন। ১০ জনের মধ্যে ৯জন ষোড়শ সংশোধনী

বাতিলের পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। এ ৯জন হলেন- বিচারপতি টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, অ্যাডভোকেট এ এফ হাসান আরিফ,ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল,  অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী এবং অ্যাডভোকেট এমআই ফারুকী।

ষোড়শ সংশোধনী রাখার পক্ষে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে একমাত্র ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি মত দিছেন। এছাড়া ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ বিষয়ে কোনো মতামত দেননি।

২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। মামলাটির সঙ্গে সাংবিধানিক বিষয় জড়িত থাকায় হাইকোর্ট সরাসরি আপিলের অনুমতি দেন। ওই বছরের ১১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি  প্রকাশ  হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।

১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারনের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর গত ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা এবং সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো এ সংশোধনী প্রত্যাখান করে। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন।

আবেদনে বলা হয়, এই সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। কারন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্যতম অংশ। কিন্তু এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি। আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের ডিভিশন বেঞ্চ ওই সংশোধনী  কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করে। পরে এই রুল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হককে এই বিশেষ বেঞ্চে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এ মামলার রুল শুনানিতে দেশের শীর্ষ ৫ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসিকে অ্যামিকাসকিউরি হিসেবে অভিমত নেন আদালত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!