• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
রাষ্ট্রপতির কাছে ৩ প্রস্তাব

সংকট নিরসনের আশাবাদ বিএনপির


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬, ১২:৪২ পিএম
সংকট নিরসনের আশাবাদ বিএনপির

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষে রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেন

জাতীয় সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শুরু হয়েছে। গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) রবিবার বিকেলে বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রায় এক ঘণ্টার এই সংলাপে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।

সংলাপ শুরুর আগে বঙ্গভবনের দরবার হলে এসেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কুশল জানতে চান। উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি ‘মোটামুটি’ আছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ সময় তার স্পিকার থাকার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে বলেন, ‘আগে জাতীয় সংসদে থাকতে তো দেখা হতো। এখন তো আমি দূরে থাকি।’ এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সংলাপ শেষে বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে সবাইকে নিয়ে দরবার হল থেকে বেরিয়ে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় বঙ্গভবনের অক্টাগনালে দাঁড়িয়ে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সদস্যদের বিদায় জানান তিনি। বিকেল ৫টা ৩৮ মিনিটে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি। সেখান থেকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের বিফ্রিং করা হয়। 

আনুষ্ঠানিক এই ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবেন, কারণ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে বিএনপি এ ব্যাপারে আশাবাদী। এ সময় তিনি বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। তবে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের শুধু একটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, আর কোনো প্রশ্ন নেননি তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে খুশি হয়েছি, আশাবাদী হয়ে উঠেছি, কেননা রাষ্ট্রপতি একজন আপাদমস্তক রাজনৈতিক নেতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে জড়িত। সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষ। আমরা আশা করি, তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সফল হবে এবং এর মধ্য দিয়ে সংকট নিরসন হবে। বঙ্গভবনে ‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে উষ্ণ আমেজে’ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ আন্তরিকতা দিয়ে আমাদের স্বাগত জানিয়েছেন। অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি মনে করেন, ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, সাহসী ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা জরুরি। আশা করি, সবাই এতে থাকবেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৮ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন সংবাদ সম্মেলন করে যে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন, তারই একটি সারাংশ তারা সংলাপে তুলে ধরেছেন। নির্বাচন কমিশন গঠনের পদ্ধতিগত দিকগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, দেশের সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু এ বিষয়ে কোনো আইন নেই, তাই এই উদ্যোগ রাষ্ট্রপতির নেয়া প্রয়োজন বলে আমাদের দলের নেত্রী মনে করেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়ার ১৩ দফার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এই প্রস্তাব ভবিষ্যতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) এও মনে করেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’ 

বিএনপি মহাসচিব গণমাধ্যমকে আরো জানান, এই সংলাপে মূলত তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে বিএনপি। 

১. একটি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দিতে সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে ‘বাছাই কমিটি’ গঠন।
২. সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন।
৩, আরপিও (নির্বাচনী আইন) সংশোধন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি, কী পদ্ধতিতে বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। একজন আহ্বায়ক এবং চারজন সদস্য হবেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘তিনি এই পদ্ধতিগত বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। গতকালই প্রথম তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে কথা বললেন।’ রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘একমাত্র আপনারাই আমাকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, তাই আপনাদের (বিএনপি) ডেকেছি।’ 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের আশা, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এখন রাষ্ট্রপতি ‘বাছাই কমিটি’র পদ্ধতি নির্বাচন করবেন। তিনি (রাষ্ট্রপতি) আগামী মাসের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শেষ করবেন বলে আমরা আশাবাদী।’

এদিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) রবিবার বিকাল ৪টা ২৬ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছালে বঙ্গভবনের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান তাকে স্বাগত জানান। সাতটি গাড়িতে করে বিএনপির প্রতিনিধিদলের ১১ সদস্য তার আগেই বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। প্রতিনিধিদলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান,  ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার।

এর আগে গতকাল বেলা ৩টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। বিএনপির দলীয় পতাকা লাগানো ওই গাড়িতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তবে বঙ্গভবনে পৌঁছানোর পর দরবার হলে থাকার সুযোগ হয়নি তার। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরউদ্দিন আহমদ বঙ্গভবনে ঢুকতে পারেননি। আর এই বৈঠকের জন্য বঙ্গভবনে বিএনপির পাঠানো প্রতিনিধিদলের তালিকায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাসের নামও ছিল, কিন্তু অসুস্থতার কারণে তরিকুল ইসলাম এবং সিঙ্গাপুরে থাকায় মির্জা আব্বাস সংলাপে উপস্থিত থাকতে পারেননি।  

২০১২ সালে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার আগেও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। সেই আলোচনাতেও বিএনপি অংশ নিয়েছিল। তবে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে কমিশনকে শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেনি বিএনপি। কাজী রকিবের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে যেভাবে ইসি গঠন করা হয়েছিল, এবারো একই পদক্ষেপ নিয়েছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ চূড়ান্ত করলেও এ ক্ষেত্রে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে চলতে হবে, কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া অন্য সব কাজেই তাকে সরকার প্রধানের পরামর্শ মেনেই কাজ করতে হয়।

রাষ্ট্রপতির পরবর্তী সংলাপ : জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রপতি বসবেন আগামীকাল (২০ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার বিকেল ৩টায়। পরদিন বিকাল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও সাড়ে ৪টায় কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ এবং বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় সরকারের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে বসার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতির। প্রথম পাঁচটি দলের পর চলতি সপ্তাহে আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলে বঙ্গভবনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে : ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন 
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে বিএনপি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে তা শুনেছেন। সুপারিশ বাস্তবায়নে চেষ্টা করবেন বলে কথা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটি গঠনে বিএনপি কোনো নাম প্রস্তাব করেছে কি না জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন বলেন, তা বলার সময় এখনো আসেনি। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, প্রয়োজনে তিনি আবার বিএনপিকে ডাকবেন। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!