• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারলো না বিএনপি


এস এম খালিদ হোসেন অক্টোবর ২২, ২০১৬, ০৯:৩৫ পিএম
সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারলো না বিএনপি

বিএনপির গত মার্চ (২০১৬) অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ শুভেচ্ছা না জানিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিএনপির তা অনুসরণ করা উচিত হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে সত্যিই হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। 

সম্মেলনের আমন্ত্রণ পেয়ে গত শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় সরকারি দলের উদ্দেশ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছিলেন, ‘আমরা খুশি হয়েছি আমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন, আমরা আনন্দিত। আমাদের সম্মেলনে কিন্তু আপনারা আসেন নাই। সৌজন্যবোধ দেখিয়ে টেলিফোন করে দুঃখ প্রকাশও করে নাই।’

বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘কিন্তু আমরা আপনাদের মতো হীনমন্য নই। বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলকে আপনাদের সম্মেলনে যাওয়ার জন্য বলেছেন। বিএনপি যে উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সেই প্রমাণ আপনারা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন পাবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা যাব।’

আলালের এমন বক্তব্যে রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তবে শনিবার (২২ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপির কাউকে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে দলটির আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়াও জানানো হয়নি। আলাল কার্যত আত্মগোপনে রয়েছেন। 

আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও রাজনীতি বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা হয়। বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘বিরোধীদল যেখানে ঘরে বাইরে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে না। সেখানে এমন কাউন্সিল মনে হচ্ছে এটা একটা দলের কাউন্সিল না সরকারের কাউন্সিল।’

আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যাওয়ার কথা বলেছিলেন বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিরিন বলেন, ‘যেখানে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী মামলা-হামলা, গুম, খুন নির্যাতনের শিকার হয়েছে; সেই পরিস্থিতিতে বোধ হয় নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, দলটির নেতাদের রাজনৈতিক দূরদর্শীতার ঘাটতির ফলে দল সাংগঠনিক বিপর্যয়ে থাকায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। আবার কেউ বা মনে করছেন, ‘টকশোবাজ’ আলাল স্বভাব সুলভ ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি’ করেছেন। 

অপর একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যাওয়ার জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং খায়রুল কবির খোকনের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত ছিলো যা পরে বাতিল হয়েছে। তবে উল্লেখিত ৩ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

আরেকটি সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ড. ইউনুসসহ বিশিষ্টরা অংশ না নেয়ায় বিএনপি সেখানে অংশ নেয়নি। 

আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আমাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা খুশি হতাম যদি তারা বিএনপির কাউন্সিলে আসতেন। দুঃখজনক হলেও সত্য তারা শুধু আসেন নাই তা নয়, তারা বিভিন্নভাবে বিএনপির কাউন্সিলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।’

বিএনপির সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন খান মোহন। তাদের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন প্রকাশনা উপকমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘খুব ভালো কাউন্সিল হয়েছে। আমার দেখা মতে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল এমন কাউন্সিল করতে পারে নাই। ফরেন ডেলিগেশন বা অন্যান্য সব কিছু চমৎকার। একটা বড় রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল এরকম হওয়া উচিত ছিলো।’

মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, ‘বিএনপির কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল শুভেচ্ছা জানাতে না এসে যে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিএনপির তা অনুসরণ করা উচিত হয়নি। ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত ছিলো এবং যাওয় উচিত ছিলো। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন না থাকলে সে দেশের পরিবেশ ভালো থাকে না।’

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যেতে বিএনপির বাধা কি ছিলো? এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, ‘হতে পারে চেয়ারপারসনের কাছ থেকে এ বিষয়ে কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি বা বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ দেখতে প্রধানমন্ত্রীকে যারা বাধা দিয়েছিলেন তাদের কারণেই বিএনপির কোনো প্রতিনিধি আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যেতে পারেনি। বিএনপির ওপরে ওঠার সুযোগ ছিলো কিন্তু কুচক্রী মহল তা হতে দেয়নি।’

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন দুই দলের সম্পর্কের দূরত্বের কথা। 
বিএনপির কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ শুভেচ্ছা না জানিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিএনপি কি তাই করলো কি-না জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা সকাল বেলা উঠেই বিএনপিকে গালাগাল শুরু করে। চেয়ারপারসন মহাসচিবসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। যারা প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে তারাই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপির প্রতিনিধি দল যেতে দেয়নি। এসব বক্তব্য প্রসঙ্গে আব্দুস সালাম বলেন, কারণ তো অনেকই থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পারিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করে দ্রুত নির্বাচন দাবি করেন।   

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনা প্রধান মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, অনেক সংগ্রাম করেছে, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল, তখন বিএনপি ছিলো না। তাদের সুশাসন সমৃদ্ধি কামনা করছি।’

পুরোনো বিভেদ ভুলে সম্পর্ক উন্নয়নে আশা প্রকাশ করে মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘পুরাতন দিনের কথা ভুলে যেতে হবে। সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুটি প্রধান দল একদল অন্য দলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে, গণতন্ত্রের, সব কিছুর, এবার হয়নি পরের বার হবে।’ 

এদিকে, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপির শরিক দলের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে তারা এতে আমন্ত্রণ পাননি। 

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!