• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংগীত শিক্ষক যখন দুর্ধর্ষ অস্ত্র ব্যবসায়ী!


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১০, ২০১৮, ০৫:৩৭ পিএম
সংগীত শিক্ষক যখন দুর্ধর্ষ অস্ত্র ব্যবসায়ী!

ঢাকা : ওস্তাদ এ কে এম শাহাবুদ্দিন খাঁ। তার বাঁশির জাদুতে বিমোহিত হয় মন। সঙ্গীতে তার অগাধ জ্ঞান। বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঙ্গীতের শিক্ষক তিনি। লোকজন শ্রদ্ধায় তার নামের পেছনে 'ওস্তাদ' যুক্ত করে ডাকেন। তার এই ওস্তাদ পরিচয়ের নেপথ্যে তিনি ভয়ঙ্কর অস্ত্র ব্যবসায়ী। সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেন অস্ত্র।

শাহাবুদ্দিন খাঁ ময়মনসিংহের বাসিন্দা। সেখানকার লোকজন তাকে একজন ভদ্র ও বিশিষ্টজন হিসেবে চেনেন, জানেন। লোকজনের কাছে গুণীজন এই ওস্তাদের অস্ত্র ব্যবসার 'গুণ' তারা জানতেন না। তবে শনিবার (৯ জুন) সকালে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ অস্ত্র আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার করলে বেরিয়ে আসে নেপথ্যের সব কাহিনী।

পুলিশ ও ময়মনসিংহের লোকজন বলছেন, ওস্তাদ শাহাবুদ্দিন খাঁকে তারা চেনেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত সংঘের শিক্ষক হিসেবে। একাধারে তিনি শহরের সঙ্গীতবিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'নজরুল সেনা' ও 'আলোকময় নাহা সঙ্গীত বিদ্যায়তনে'র শিক্ষক।

ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতেও তিনি সঙ্গীতের শিক্ষক। পাশাপাশি ময়মনসিংহ ও আশপাশের এলাকায় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিচারক এবং নিজেও নানা অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান। জেলা উদীচীর সদস্য হিসেবেও সংস্কৃতি অঙ্গনে তার পদচারণা রয়েছে।

তবে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপকমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শাহাবুদ্দিন খাঁ হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল। সঙ্গীতশিক্ষার আড়ালে তিনি দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রের ব্যবসা করে আসছিলেন। ময়মনসিংহ শহরে 'খান আর্মস স্টোর' নামে তার নিজের বৈধ একটি অস্ত্রের দোকান রয়েছে। এ দোকানটির মাধ্যমেই তিনি সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ চিকিৎসক জাহিদুল আলম কাদির ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে শাহাবুদ্দিনের নাম। তারা জানায়, তাদের অবৈধ অস্ত্রের জোগানদাতা ওস্তাদ শাহাবুদ্দিন। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, সিটিটিসির দায়ের করা মামলায় গতকাল সকালে শাহাবুদ্দিন খাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বৈধ অস্ত্রের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার কথা স্বীকার করেছেন।

কাউন্টার টেররিজমের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের পরিদর্শক মেসবাহ উদ্দীন বলেন, চিকিৎসক জাহিদুলের কাছ থেকে যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, এর বেশির ভাগের জোগানদাতা ওস্তাদ শাহাবুদ্দিন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিতেন।

শাহাবুদ্দিন অস্ত্র পেতেন কোথায়- এমন প্রশ্নে কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক বৈধ অস্ত্রের মালিক নিয়ম মেনেই অস্ত্র বিক্রি করে থাকেন। এসব অস্ত্র হাতবদল হয়ে শাহাবুদ্দিনের দোকানে যেত। এ ছাড়া আন্ডারওয়ার্ল্ড থেকেও তিনি অস্ত্র সংগ্রহ করতেন। এসব অস্ত্র চিকিৎসক জাহিদুলসহ দেশের বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়। এই চক্রের আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ওস্তাদ শাহাবুদ্দিন খাঁ অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন- এমন তথ্য পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ময়মনসিংহের সংস্কৃতি অঙ্গনের লোকজনও। তারা তার বৈধ অস্ত্রের দোকান থাকার তথ্য জানলেও এর আড়ালে ভয়ঙ্কর ব্যবসার কথা শুনে আঁতকে ওঠেন।

ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আরজু পারভেজ বলেন, তিনি তো সবার শ্রদ্ধার মানুষ, সবাই তাকে ওস্তাদ হিসেবে মানেন। তিনি শিল্পকলায় বাঁশির ক্লাস নেন। এমন মানুষ অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা শুনে তারা ভড়কে গেছেন।

ময়মনসিংহ জেলা উদীচীর সহসভাপতি সারওয়ার কামাল রবিন আলোকময় নাহা সঙ্গীত বিদ্যায়তনের পরিচালনা কমিটির সদস্য। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকও।

তিনি বলেন, শাহাবুদ্দিন খাঁ তাদের একজন ভালো সহকর্মী; সঙ্গীত ও বাঁশি বিশেষজ্ঞ। তিনি সংস্কৃতিমনা মানুষ। তাকে শাহাবুদ্দিন খাঁর অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও গ্রেফতারের বিষয়ে অবগত করলে তিনি রীতিমতো আঁতকে ওঠেন। বলেন, কয়েক দিন ধরে তিনি ক্লাসে আসছেন না। বিষয়টির খোঁজ নেবেন। সূত্র: সমকাল

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!