• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংবিধান মেনে নির্বাচন হলে সুফল পাবে বিএনপি!


সোনালী বিশেষ আগস্ট ১, ২০১৭, ১২:৫৮ এএম
সংবিধান মেনে নির্বাচন হলে সুফল পাবে বিএনপি!

ঢাকা : সংবিধানের বিধান বাস্তবায়ন করার পক্ষে আন্দোলনই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুফল পেতে পারে বিএনপি। দেশের কয়েকজন আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ এমনই মত দিয়েছেন।

তাদের মতে, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাবিষয়ক ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নে বিএনপি জনমত তৈরি করতে পারলে এর সুফল ঘরে তুলতে পারবে দলটি। এজন্য বিএনপিকে ইসির স্বাধীনতা বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে। ইসির স্বাধীনতা ইস্যুতে জনমত গড়ে তোলাও অনেক সহজ হবে।

সহায়ক সরকারের দাবিতে না গিয়ে বরং ইসির স্বাধীনতাবিষয়ক সংবিধানের অনুচ্ছেদটি হুবহু নিশ্চিত করার আন্দোলন করলে বিএনপির জন্য তা সুফল বয়ে আনতে পারে।

প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবে এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবে।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানসম্মতভাবেই নির্বাচন হলে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বিএনপি। আর তা হলো- সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদ। এটা নিশ্চিত করতে জনমত তৈরি করতে পারলে সমান অধিকার ভোগ করবে সব রাজনৈতিক দল।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমানও মনে করেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই বিএনপিসহ সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব। একই প্রসঙ্গে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী চাইলে, সংবিধান সংশোধন না করেই নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে প্রতিনিধিত্ব থাকার সুযোগ করে দিতে পারেন।

তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে, সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বাÍক সহায়তা করবে। তফসিল ঘোষণার পর সরকার কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ না করে বদলি পদায়নসহ কোনও কাজ করতে পারবে না। বরং ওই সময় নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন যা চাইবে, তা দিতে বাধ্য থাকবে সরকার। যা ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে রয়েছে।

এসব বিষয় কিতাবে লিপিবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করা উচিত বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর। সংবিধানে দেয়া নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে সহায়ক সরকার ছাড়া সাংবিধানিক সুবিধা আপনা-আপনিই ঘরে আসবে বিএনপির। তাতে চাপ সৃষ্টি হবে আওয়ামী লীগের ওপরই।

একই প্রসঙ্গে অন্যান্য আইনজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে সহায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির চেয়ে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি অবস্থান নিলে সরকার হয়তো সমঝোতায় আসতে পারে। কিন্তু বিএনপি জনসমর্থিত দল হলেও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধি না থাকায় দলটির পক্ষে সরকারকে সহায়ক সরকারে বাধ্য করা কঠিন হবে।

এছাড়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গেলে সংবিধানের ভেতরে থেকে বিএনপির লাভবান হওয়ার মতো আরো একাধিক ধারা সংবিধানে রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে তারা সংবিধানের ১২৩ (৩) ও ১২৬ অনুচ্ছেদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

১২৩ (৩)-এ বলা আছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ- অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ- অবসান ব্যতীত অন্য কোনও কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; আর এটাও সুযোগ এনে দিতে পারে বিএনপিকে।’

আইনজীবীরা বলছেন, পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেখানে সংসদের কোনও ভূমিকা থাকবে না। এক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনদের মনোবলে চিড় ধরবে। এক্ষেত্রে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকাংশে নিরপেক্ষ থাকতে বাধ্য হবে। আওয়ামী  লীগ-বিএনপি প্রায় সমান অবস্থান  থাকবে।

এদিকে, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’ এই অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে  নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভাগ ও দফতরগুলো কার্যত, ইসির অধীনে চলে যাবে। এক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা ইসির নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য ইসি সচিবালয়ের সদ্যবিদায়ী সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাহী বিভাগের কর্মচারীরা ইসির আদেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। তাদের দায়িত্ব হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে সহযোগিতা করা। দায়িত্ব পালনে কোনও কর্মচারির অবহেলা পাওয়া গেলে ইসি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিতে পারবে।

একই প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদের বাস্তবায়ন বিএনপির সামনে বড় সুযোগ। একটি প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই অনুচ্ছেদের বাস্তবায়নই যথেষ্ট। তবে সেটা বিএনপির আদায় করে নেয়ার মতো রাজনৈতিক শক্তি থাকতে হবে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!