• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সৌদি আরব সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

সকলেরই স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার অধিকার আছে


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২২, ২০১৮, ০৯:৪৬ পিএম
সকলেরই স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার অধিকার আছে

ঢাকা : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার মন্ত্রিসভার আকার কমানো নাও হতে পারে বলে ইংগিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বর্তমান মন্ত্রিসভায় ‘সব দলের’ প্রতিনিধিই আছেন। আর নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সোমবার (২২ অক্টোবর ) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার এই ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছিলেন, ২০১৩ সালের মত এবারও ভোটের আগে ‘ছোট আকারের নির্বাচনকালীন’ সরকার গঠন করা হবে। চলতি বছরের শুরু জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নিজেও তেমনই আভাস দিয়েছিলেন।

এদিকে, গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, মন্ত্রীসভা ছোট করে নির্বাচনকালীন সরকার এবার কখন হবে এবং তার ধরন কেমন হবে। উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘ছোট না করলে কোনো অসুবিধা আছে কি না।’ নাঈমুল ইসলাম খান তখন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী কোনো সমস্যা নেই।

প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, যুক্তরাজ্যের মত যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, কোথাও নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা হয় না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা কেন পুনর্গঠন করা হয়েছিল, সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় বিরোধী দলে থাকা বিএনপি নির্বাচনে আসতে রাজি হচ্ছিল না বলে তখন তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

‘তারা যে মন্ত্রণালয় চায়, সেই মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে বলেছিলাম। তারা যখন আসেনি, তখন বিভিন্ন দলগুলো নিয়ে ছোট মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল।’ আর এবারের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা (দশম সংসদ নির্বাচনে) মেজরিটি পাওয়া স্বত্তে¡ও প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকে মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। এই মন্ত্রিসভায় জনগণের প্রতিনিধি যারা, তারা আছেন। যেহেতু সব দলের প্রতিনিধি আছে, জানি না এটাকে ছোট করার দরকার আছে কি-না। কাটছাট করা হবে কি-না।’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভা ছোট করা হলে একজনকে কয়েকটা মন্ত্রণালয় চালাতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দুই তিন মাসের জন্য থমকে যেতে পারে। এ বিষয়গুলোও ভাবতে হবে। তিনি বলেন, ‘যদি ডিমান্ড করে অপজিশন, তাহলে করব। আর না হলে কিছু করার নাই।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও করেছি। আর অন্যান্য দেশে যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, সেখানেও আমি আলাপ করে দেখেছি, যেমন অস্ট্রেলিয়াতে আছে, নিউজিল্যান্ডে আছে, ব্রিটেনে আছে বা ভারতে আছে, কেউ কিন্তু কোনো পরিবর্তন করে না। আমি জিজ্ঞেস করেছি। বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যখন গিয়েছি সবার কাছ থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করি। সবাই বলেছে, এ রকম কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমরা যেভাবে থাকি, ইলেকশন করি সেভাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়। যদি ডিমান্ড করে অপজিশন তাহলে করব, আর না করলে কিছু করার নাই।’ নির্বাচনকালীন সরকারে সুশীল সমাজের কেউ অন্তর্ভুক্ত হবে কি না এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুশীলরা সুশীলই থাক। আমার মন্ত্রী হলে তো শেষে সুশীল থাকবে না। তখন সুশীল নামটা চলে যাবে। তখন তো তাদের ক্ষতি হয়ে যাবে, ক্ষতি হয়ে যাবে না?’

নতুন গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেকে ‘ছাল-বাকল দিয়ে তৈরি’ জোট বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই জোটকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আছে। এখানে বিচার বিভাগ স্বাধীন, গণমাধ্যম স্বাধীন। যে কেউ ইচ্ছে করলে রাজনীতি করতে পারে। আমি নতুন জোটকে স্বাগত জানাই।’ প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে বলেন, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও নারী কট‚ক্তিকারীদের ঐক্য হয়েছে। নতুন জোট সফল হলে অসুবিধা কোথায়?

সংবাদ সম্মেলনের প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে সৌদি আরব সফরের বর্ণনা দেন। তিনি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে তার একাধিক বৈঠকে আলোচিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাক্ষাতের সময় বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি আরবকে আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেন। এসময় সৌদি বাদশাহ বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। আর উন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একে স্বাগত জানাই। তবে একটু লক্ষ্য রাখা দরকার, কারা কারা এক হলো। কোন চরিত্রের লোক তারা। এমনকি মেয়েদের প্রতি কার কী মন্তব্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তায় নেই। শেখ হাসিনা বলেন, এখানে স্বাধীনতা বিরোধী আছে, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী আছে। সব মিলেই কিন্তু একটা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগে ছিল। তারা এখন আওয়ামী লীগের বিরোধী হয়েছে।

নবগঠিত জোটের সাত দফা দাবি নিয়ে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাত দফা আর কত দূর যায় তার জন্য অপেক্ষা করে আছি। তারপর আমি আমার বক্তব্য দেব।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও এক হয়েছে, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা) সেখানে যুক্ত হয়েছেন, তারা কেমন, মেয়েদের প্রতি কেমন মনোভাব তাদের, সেটাও সবাই দেখেছেন। এখানে স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নরাও রয়েছে। সবাই মিলে এক জায়গায় হয়েছে। এটাকে বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে দেখেন সেটাই বিষয়। তিনি বলেন, ‘অনেকেই (জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের) আওয়ামী লীগে ছিলেন, এখন আওয়ামী লীগ থেকে চলে গেছেন। রাজনীতিতে সকলেরই স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার অধিকার আছে।’

বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ সৌদি বাদশাহ গ্রহণ করেছেন : সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সৌদি বাদশাহকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়াটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ২০০৮ সালে যে নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছিলাম তাতে যা যা আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এরপর ২০১৪ সালেও আমরা বলেছিলাম এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আপনারা জানেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। এটাকে ধরে রাখতে হবে। তাই আর্থসামাজিক উন্নয়নের যে কাজগুলো আমরা পরিকল্পনা করেছি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছি। অর্থাৎ শত বছরের বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে তার একটি পরিকল্পনা করেছি। আমরা ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই, সেই পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করেছি এবং আমরা তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে দেখতে চাই ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে। দারিদ্র্যের হার আমরা ইতোমধ্যে ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালে আরও নামিয়ে আনার।

প্রসঙ্গত, সোমবার গণভবনে সৌদি আরব সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই সংবাদ সম্মেলন করেন। গত ১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে ১৯ অক্টোবর শুক্রবার পর্যন্ত সৌদি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে বরাবরই রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনায় আসে। এবারও সিনিয়র সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রসঙ্গ তোলেন এবং প্রধানমন্ত্রী সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!