• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল নোট তৈরি চক্র


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১২, ২০১৬, ০৩:১৬ পিএম
সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল নোট তৈরি চক্র

আসন্ন রমজান ও ঈদকে টার্গেট করে জাল নোট তৈরি চক্র ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর ওই চক্রকে সহযোগিতা করছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তথ্যানুযায়ী বর্তমানে ঢাকাকেন্দ্রিক অন্তত ৩৫টি সক্রিয় চক্র রয়েছে। এবারের ঈদবাজারে তারা ১৫ কোটি টাকার জাল নোট ছড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। 

অপরাধী চক্র জাল টাকার ডিজাইন ও ছাপার কাজটি বরাবরই নিখুঁতভাবে করে আসছিল। তবে শুধু টাকা ছাপানোর বিশেষ ধরনের কাগজ তৈরির ক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতা ছিল। কৃত্রিমভাবে তৈরি করা কাগজ প্রায় আসলের মতো দেখতে হলেও তাতে কিছু ত্রুটি ছিল। এবার টাকার আসল কাগজই জাল নোট চক্রের হাতে এসে পড়েছে। পাকিস্তান থেকে পাঠানো সেই কাগজে ছাপা বেশ কিছু নোট ইতিমধ্যেই বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমন কয়েকটি নোট বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতেও পড়েছে।

সেগুলো এতোটাই নিখুঁত যে জাল টাকা হিসেবে শনাক্ত করাই মুশকিল। ওই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন পাকিস্তানের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা টাকার কাগজ এদেশে পাঠাচ্ছে। বিশেষ কওে যুদ্ধাপরাধীদের দন্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে দেশটির আহ্বান না শোনায় ক্ষিপ্ত হয়েই তারা এই অপতৎপরতা শুরু করে বলেও তথ্য মিলেছে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পাকিস্তানের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে ভারতের জাল রুপি ছাপারও অভিযোগ রয়েছে। আইএস রুপি নামে পরিচিত ওই রুপি ছাপা হয় হবহু আসল রুপির কাগজে। তারপর বিভিন্ন রুটে তা ভারতে পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এমন জাল রুপি ও পরিবহনে জড়িতরা বাংলাদেশে ধরাও পড়েছে। কিন্তু সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। বাংলাদেশ এই বিষয়ে একাধিকবার প্রতিবাদও জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের টাকার হুবহু আসল কাগজ এখানকার জাল নোট চক্রের কাছে পাঠাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সংগ্রহ করা ওই কাগজ আসল টাকার সব বৈশিষ্ট্যই ধারণ করে। এমনকি গোয়েন্দারাও অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়েছেন যে নোটটি জাল।

সূত্র জানায়, বিগত পাঁচ-ছয় মাস আগেই এদেশের গোয়েন্দারা পাকিস্তান থেকে টাকার কাগজ আসার বিষয়টি প্রথম জানতে পারে। তবে তখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। পরে এমন কিছু জাল নোট যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে সে সম্পর্কে তথ্য মেলে। ঢাকায় জাল টাকার অন্তত ৩৫ জন কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানি বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যার জাল টাকা ছাপার পুরো ব্যবস্থা রয়েছে। একজন কোম্পানির কমপক্ষে দু'জন হ্যান্ডল বা সহযোগী থাকে।

সহযোগীদের কাজ হলো কম্পিউটার প্রিন্টারে কাগজ দেয়া এবং প্রিন্ট বের হলে তা টাকার আকারে কেটে গুছিয়ে বান্ডিল করে রাখা। এবারের ঈদবাজারে ছোট-বড় কোম্পানির টার্গেট ১৫ কোটি টাকার জাল নোট ছেপে বাজারে ছড়িয়ে দেয়া।

এদেশে জাল নোট চক্রের হোতা বা কোম্পানির মধ্যে কয়েকজন হলো- শাহাবুদ্দিন, জাকির, রহিম, হুমায়ুন, কাওসার, আলমগীর, ইমন, রহিম বাদশা, ছগীর মাস্টার ও কামাল মাস্টার। তাদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন, জাকির ও রহিম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। জাল নোট চক্রের হোতাদের নেটওয়ার্কে থাকে খদ্দের ও কামলা বলে দুই শ্রেণির মানুষ। খদ্দেররা সরাসরি কোম্পানি থেকে পাইকারি দরে জাল নোট কিনে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে যান।

সেখানে তাদের কাছ থেকে অল্প পরিমাণে নোট কিনে নেন কামলা বা খুচরা বিক্রেতারা। তারা সাধারণত এক হাজার টাকার ১০টি নোট তিন হাজার টাকায় কেনে। অন্যদিকে খদ্দেররা মানভেদে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কেনে এক হাজার টাকার নোটের ১০০টির এক বান্ডিল। ওই পরিমাণ জাল টাকা উৎপাদনে কোম্পানির খরচ পড়ে মাত্র তিন থেকে চার হাজার টাকা।

সূত্র আরো জানায়, জাল নোট তৈরির ক্ষেত্রে চারটি ভাগে কাজ হয়। এক ভাগের লোকজন শুধু নিরাপত্তা সুতা তৈরি করে। দ্বিতীয় ধাপের লোকজন ওই সুতা কিনে জলছাপসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দিয়ে বিশেষ ধরনের কাগজ তৈরি করে। ওই কাগজ কেনে নেয় কোম্পানি বা চক্রের হোতারা। আরেক ধাপের লোকজন টাকার মূল ডিজাইন করে দেয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহমুদ নাছের জনি জানান, নিখুঁত জাল নোট তৈরির ক্ষেত্রে চক্রগুলোর মধ্যে সব সময়ই প্রতিযোগিতা চলে। যার টাকা যতো বেশি খুঁতহীন হবে, তার টাকার বিক্রয়মূল্যও ততো বেশি হবে। ওই কারণে তারা নানাভাবে আসলের মতো দেখতে জাল নোট তৈরির জন্য রীতিমতো গবেষণা চালিয়ে যায়। তবে সে বিষয়ে ডিবিও সতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন ধরাও পড়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!