• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সঙ্কটে আ.লীগ-বিএনপি


বিশেষ প্রতিবেদক অক্টোবর ২০, ২০১৮, ০৬:৪৪ পিএম
সঙ্কটে আ.লীগ-বিএনপি

ঢাকা : জাতীয় নির্বাচনের আর প্রায় আড়াই মাসের মতো সময় থাকলেও ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেয়ে জোট ভাঙাগড়ার দিকেই বেশি মনোযোগ প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। আগে থেকেই দলদুটি দেশের সবচেয়ে বড় দুটি জোটকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

জোটের ভেতর আসন ভাগাভাগি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু না হলেও শরিকরা এখনই যা দাবি করেছে তাতে তাদের সন্তুষ্ট করতে হলে নিজেদেরর দলের নেতাদের জন্য খুব বেশি আসন অবশিষ্ট থাকবে না তাদের।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এরইমধ্যে ১১৬টি আসনে প্রার্থী দিতে চেয়েছে। এর বাইরে ২০০৮ সালের মতো নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি যেভাবে জোটে এসেছিল এবারও সেরকম কিছু ঘটলে তারাও ১০০ আসন চাইবে।

এই জোটের নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় পার্টির সূত্রগুলো বলছে, সবার দাবি পূরণ করলে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জন্য আসন অবশিষ্ট থাকবে মাত্র ৮৪টি।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অবস্থাও ১৪ দলীয় জোট থেকে ভিন্ন কিছু নয়। জোটের নেতার বলছেন, তাদের শরিকরা মোট ১৭৪ আসন দাবি করেছে। এর বাইরেও নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্যও বিএনপিকে আসন ছাড়তে হবে।

আগামী ৩০ অক্টোবরের পর যেকোনো সময় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে এমন কথা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে রাখা হলেও কোনো জোটের ভেতরেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়নি।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বচন কমিশন এখনো তফসিল ঘোষণা করেননি। আর বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা এই নেতা দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আসান ভাগাভাগির ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করবেন তারা।

অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য, আগামী নির্বাচনে তার দল অংশ নিবে কি না সেই ঘোষণা এখনও হয়নি। ফলে এখনই জোটের মধ্যে আসান ভাগাভাগির প্রশ্ন আসছে না।

গত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টি ও জামায়েত-ই-ইসলামিরও বেশ কয়েকজন সাংসদ হয়েছেন। মাঠ পর্যায়েও দল দুটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শক্তি রয়েছে। কিন্তু জোটের অন্যান্য বেশিরভাগ দলই নাম সর্বস্ব ও তৃণমূল পর্যায়ে তেমন নেতাকর্মী নেই। শর্ত পূরণ করতে না পারায় অনেক দলের আবার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনও নেই। নিবন্ধিত হওয়া নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার পূর্বশর্ত। এই অবস্থায় জোটবদ্ধভাবে এসব দলের কাউকে নির্বাচন করতে হলে জোটের নেতৃত্বে থাকা দলের প্রতীক নিয়েই তাদের লড়তে হবে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের (দুইটি দল বের হয়ে যাওয়ায় এখন ১৮ দলীয় জোট) অন্যতম শরিক জামায়াত-ই-ইসলামী। তাদের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তারাও দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু দলটি চায় তাদের নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপি যেন ৬০টি আসন ছেড়ে দেয়। এই মুহূর্তে ছোট ছোট ৫৮টি দল নিয়ে জোট গড়ে রয়েছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু এই জোটের ব্যানারেই তারা নির্বাচনে অংশ নিবে নাকি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিবে সেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে দলটি।

দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তারাও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিবেন। দলটির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, তাদের জোটের (৫৮ দল) কিছু শরিক এরই মধ্যে তাদের নেতাদের জন্য আসন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আমাদের এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা আওয়ামী লীগের জোটে যুক্ত হলে আসন ভাগাভাগির সমিকরণ ভিন্ন হবে। সেক্ষেত্রে আমরা আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চাইব।’

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যান্য শরিকরাও এরই মধ্যে বেশ কিছু আসন দাবি করে বসে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে তা সে জোটেই থাকি বা বাইরে। আলাদাভাবে নির্বাচন করলে আমাদের ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের কাছে আমরা ১৫ জনের নাম পাঠিয়েছি। পুরো বিষয়টি আলাপ আলোচনার ওপর নির্ভর করলেও ১২টি আসন পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

আর সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া জানান, তারা ছয়টি আসনে প্রার্থী দিতে ইচ্ছুক। আওয়ামী লীগের কাছে থেকে অন্তত একটি আসন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। সেক্ষেত্রে তিনি নিজে চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান।

গণতন্ত্রী দলের সভাপতি মোহাম্মদ আরাশ আলী বলেন, তাদের দলের ২৫ জন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। এরই মধ্যে তারা তাদের মনোভাবের কথা দলকে জানিয়েছেন। তালিকাটি যাচাই বাছাই ও সংক্ষিপ্ত করে আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানোর কথা জানান তিনি।

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন প্রাথমিকভাবে ৩০টি আসনে নির্বাচন করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনা করেই তারা অন্তত ১০টি আসন চায়। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী বক্তব্য, শেষ সিদ্ধান্ত নিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একইভাবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকরাও তাদের নিজ দলের নেতাদের জন্য আসন চাইতে শুরু করেছে। এই জোটে থাকা জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, ৪০টি আসনে নির্বচন করার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। আশা করছি জোট থেকে অন্তত চারটি আসন ছেড়ে দেওয়া হবে আমাদেরকে।

এছাড়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির দপ্তর সম্পাদক আল আমিন ভ‚ঁইয়া বলেন, তাদের নেতাদের জন্য অন্তত ১০টি আসন চাইছেন তারা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!