• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সঙ্কটের পাহাড় মাথায় ‘নিশ্চুপ’ বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৮, ২০১৬, ০৯:৩১ পিএম
সঙ্কটের পাহাড় মাথায় ‘নিশ্চুপ’ বিএনপি

ঢাকা: অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি হাতছাড়া, জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের পদক কেড়ে নেয়ার পর এবার স্থপতি লুই আই কানের নকশা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতার কবর সরানোর মতো পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, এগুলো সরকারের প্রধান নির্বাহীর ব্যক্তিগত জিঘাংসা থেকে করা হচ্ছে; তারপরও বিএনপির অস্তিত্বের জায়গায় বারবার আঘাত এলেও কার্যত কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলের প্রতিষ্ঠাতার কবর সরানোর বিষয়েও দর্শকের ভূমিকা ছাড়া আপাতত কিছুই করার নেই বিএনপির।

বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়া, তারেক রহমানের সাজা এবং জিয়াউর রহমানের পদক কেড়ে নেয়ার মতো ইস্যু পেয়েও বিএনপি কার্যত কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। সারাদেশের নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষা থাকার পরও গড়ে ওঠেনি প্রতিরোধ। এসব ইস্যুতে ঘরোয়া মিটিং এবং সংবাদ সম্মেলনের মতো মৃদু প্রতিবাদকে পাত্তা দেয়নি সরকার।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার এবার জাতীয় সংসদ এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর এবং জাতীয় কবরস্থানসহ বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এমন উদ্যোগ বা আয়োজনের খবরে বিএনপি নেতারা এরই মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের জনগণ সরকারের এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।

মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি ঘরানার রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী সিরাজ বলেন, মহাসচিব যে কথা বলেছেন, তাতে বোঝা যায়, বিএনপি বিষয়টি নিয়ে একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির আন্দোলনটা করবে কে, দলতো এখন দলের মতো চলে না। এটা এখন কোম্পানি। কিছু চাটুকার এখন এর মালিক বনে গেছে।

কাজী সিরাজ আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অফিস কিছু দালালের হাতে জিম্মি। জিয়াউর রহমানের প্রতি দেশের মানুষের যথেষ্ঠ সহানুভূতি আছে। এ ইস্যু নিয়ে মাঠে থাকতে পারলে সরকার হয়তো পিছু হটতে পারে। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে বিএনপির ভেতর সিদ্ধান্ত নেয়ার লোকের সংখ্যা কম। যারা আছেন, তারা চেয়ারপারসনের কাছে যেতে পারেন না।

সূত্রমতে, মার্কিন স্থপতি লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এমন পরিকল্পনায় সরিয়ে নেয়া হবে নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনা। এর মধ্যে রয়েছে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর। সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের বাড়ি, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (সাবেক চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র) এবং শাহ আজিজুর রহমান, সবুর খান, মশিউর রহমান জাদু মিয়াসহ সাতটি রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কবরও।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভে রক্ষিত স্থপতি লুই কানের তৈরি করা জাতীয় সংসদের ৮৫৩টি মূল নকশা বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাতে সংসদ ভবনে এসে পৌঁছে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং স্থাপত্য অধিদপ্তর মূল নকশা যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সরকারকে একটি প্রতিবেদন দেবে। তারপর গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কারকাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি জানান, শুধু জিয়াউর রহমানের কবর নয়, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে লুই কানের নকশার বাইরের সব স্থাপনা দুই মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হবে।

জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর ইস্যু নিয়ে কী করবে বিএনপি— উত্তরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিষয়টি বেশ কিছু দিন থেকে আলোচনায় আছে। এই সরকার জিয়াউর রহমানে নাম মুছে ফেলতে চায়। জিয়া এ দেশের মাটি ও মানুষের অন্তরে গেঁথে আছে। পদক নেয়া, কবর সরানোর মতো ঘৃণ্য কাজ করে সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিএনপি আন্দোলন করবে না আইনগতভাবে এগোবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটি দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো এই বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানা যাবে।

তবে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, জিয়ার কবর উচ্ছেদ হলে ওই ইস্যুতে খুব বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা আপাতত নেই। দলের সমস্ত মনোযোগ এখন চেয়ারপারসনের মামলার দিকে। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ নির্বাচনী রূপরেখা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দল। আপাতত অন্য যেকোনো ইস্যুর জবাব গতানুগতিকভাবেই দেয়া হবে। এর বাইরে কবর সরানোর ইস্যুতে দেশ-বিদেশে জনমত গঠনের ওপরই জোর দেবে বিএনপি।

জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা দলের কোনো পর্যায়ে হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান জানান, সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে এখন যে পদক্ষেপই নিক, আপাতত বড় কোনো আন্দোলনে যাবে না দল। আমাদের এখন একমাত্র লক্ষ্য একটি অবাধ নির্বাচন আদায় করে নেয়া। এ ছাড়া অন্য ইস্যু নিয়ে বিএনপি আপাতত শক্তি ক্ষয় করতে রাজি নয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!