• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চালন লাইন পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ, শিল্প-কারখানায় গ্যাস সঙ্কট


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৯, ২০১৬, ০১:১১ পিএম
সঞ্চালন লাইন পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ, শিল্প-কারখানায় গ্যাস সঙ্কট

জিটিসিএল (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড) ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৬১ কিলোমিটার দৈর্ঘের আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ পাইপলাইন এবং একই মাপের ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘের বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ পাইপলাইনে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছে। ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া ওই কার্যক্রম ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। ওই সময় পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকবে। এ পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প-কারখানাগুলোতে গ্যাস সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। 

ইতিমধ্যে গ্যাসের অভাবে রাজধানীর আশপাশের শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ কারখানা বন্ধের উপক্রম। অথচ কয়েকদিন পরই মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। তারপরই হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা উৎসব। পাশাপাশি চলছে রফতানির পিক সিজনও। এ পরিস্থিতিতে বিশেষ করে পোশাক শিল্পের মালিকরা মারাত্মক বিপাকে পড়েছে। 

আর শুধুমাত্র শিল্প-কারখানাই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশ এলাকায় সিএনজি স্টেশন ও বাসাবাড়িতেও গ্যাসের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে সিএনজি স্টেশনে এখন দীর্ঘ লাইন। কারণ স্টেশনে গ্যাসের চাপ নেই। আবার অনেক স্থানে গ্যাসের চাপ কম থাকায় চুলাও জ্বলছে না। তিতাস গ্যাস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকার শিল্প-কারখানাগুলো কয়েক বছর ধরেই গ্যাস সঙ্কটে ভুগছে। গ্যাসের স্বল্পতায় অনেক সময়ই কারখানা চালু রাখতে পারছে না উদ্যোক্তারা। কিন্তু সম্প্রতি ওই সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই ছোট ও মাঝারি মানের অধিকাংশ কারখানাই গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। 

উৎপাদনের ভরা মৌসুমে দীর্ঘ ৯ দিন গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হলে পোশাক শিল্পে চরম সঙ্কট দেখা দেবে। ওই সময় পোশাক কারখানা বন্ধ বা উৎপাদন ব্যাহত হলে বিদেশি ক্রেতাদের আদেশ সঠিক সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। ফলে অনেক রফতানি আদেশই বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

তাছাড়া সামনে দুটি বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ ও দুর্গাপূজা থাকায় উৎসবকেন্দ্রিক দেশীয় বাজারেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে বিশেষ করে মাঝারি ও ছোট কারখানাগুলোর ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে শিল্প মালিকদের মতে গ্যাস পাইপলাইন সংস্কারের কাজ ঈদের ছুটিতে করা যেতো। তখন ওই কারখানাগুলো বন্ধ থাকে। ফলে উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হতো না।

সূত্র জানায়, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা বর্তমানে ৩৫০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু পেট্রোবাংলা সরবরাহ করে প্রায় ২৭০ কোটি ঘনফুট। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্যাস ৪০ শতাংশ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ খাত। আর শিল্প খাতে ব্যবহার হয় ১৭ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও তীব্র গ্যাস সঙ্কটে পড়েছে।

এমনকি ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তাছাড়াও অন্য কেন্দ্রগুলোতেও গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে। 

পাশাপাশি  তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, এখন উৎপাদনের ভরা মৌসুম। পণ্যের অর্ডার বেশি থাকে। পুরোদমে উৎপাদন করেও আমদানিকারকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। এই সময়ই গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। 

পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে অনেক রফতানি অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া গ্যাস সংকটে ঈদ ও পূজায় স্থানীয় বাজারেও পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। অথচ কর্তৃপক্ষ ঈদের ছুটিতে পাইপলাইনের পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করলে সবাই উপকৃত হতো।

জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান সমকালকে জানিয়েছেন, জিটিসিএলের এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজের কারণে অন্য সময়ের তুলনায় ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছে। এতে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, মুক্তারপুর, মুন্সীগঞ্জ, জিঞ্জিরা ও ঢাকা নগরীতে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সঙ্গে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকাতেও গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে বলে তিতাস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ফলে গ্যাস সংকট বেড়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ জানান, নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পাইপলাইন দুটি পরিষ্কার করা হচ্ছে। তাতে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কমেছে। ফলে রেশনিংয়ের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা হচ্ছে। তাছাড়া বিকল্প উপায়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
 
আর ঈদের ছুটিতে এই কার্যক্রম চালানো হলে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হতো না- শিল্প মালিকদের এমন দাবির বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, ওই সময় (ঈদের ছুটিতে) পর্যায়ক্রমে বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও বাঙ্গুগুরা গ্যাসক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম চলবে। তখন কয়েকটি ক্ষেত্রেই গ্যাস উত্তোলন বন্ধ থাকবে। 

অবশ্য গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ থাকলে পাইপলাইনে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো যায় না। সবদিক বিবেচনা করেই সঞ্চালন লাইনের পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করা হয়েছে। কারণ সময়মতো পাইপলাইন পরিষ্কার না করলে ময়লা ও গাদ জমে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। যদিও গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় শিল্প উৎপাদন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!