• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত সাড়ে ১৪ লাখ ক্যানসার রোগী


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২০, ২০১৬, ০৬:৫৪ পিএম
সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত সাড়ে ১৪ লাখ ক্যানসার রোগী

দেশে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ ক্যানসার রোগী সঠিক চিকিৎসাসেবা পান না। ফলে তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান। ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রের স্বল্পতা, যন্ত্রপাতি সংকট ও পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকাই এর কারণ বলে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে। এদিকে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৯১ হাজার মানুষ ক্যানসারে মারা যাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হন ২ লাখ ৫০ হাজার জন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে ও ক্যানসার রোগ প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

তারা জানান, বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ক্যানসারকে। শরীরের যে কোনো অংশে এ রোগ হতে পারে। ক্যানসার যতটা না মারাত্মক, তার চেয়ে বেশি আতঙ্কের। বর্তমানে এ মারণব্যাধির চিকিৎসা অনেক দূর এগোলেও বাংলাদেশে এর চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান বলেন, বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এত বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা দেশে নেই। সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০ হাজার রোগীর চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। বাকি সাড়ে ১৪ লাখ ক্যানসার রোগীকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তারা সঠিক চিকিৎসা না পেয়েই মারা যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী বলেন, প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে একটি করে ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র থাকার বিধান রয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিধান অনুসারে। কিন্তু আমাদের দেশে সব মিলিয়ে আছে মাত্র ২০টি কেন্দ্র। এগুলোর মধ্যে সব আবার চিকিৎসার জন্য পরিপূর্ণ নয়।

এদিকে চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি এক সেমিনারে জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. এমএ মালিক বলেন, প্রতি বছর দেশে ২ লাখ ৫০ হাজার লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এ রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। দেশের মানুষকে এ রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সেমিনারে দেশীয় ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল বলে মতামত দেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী মানবদেহ বিভিন্ন কোষের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিনিয়ত এ কোষগুলো ভাঙে ও গড়ে। এই ভাঙাগড়ার প্রক্রিয়ার কোনো একটি বন্ধ হয়ে যাওয়াই ক্যানসার। শরীরের যে কোনো অংশে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ফুসফুস। এর পরই আছে মেয়েদের জরায়ু ও স্তন। তামাক সেবন, অতিরিক্ত ওজন, আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া, রাসায়নিক পদার্থ, ক্ষতিকর আলো, ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণে ক্যানসার হতে পারে। 

জন্মগত কারণেও কখনো কখনো এ রোগ হয়। তবে ৪০ শতাংশ ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেসব কারণে ক্যানসার হয়, তা থেকে দূরে থাকলে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমে যাবে। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে তিন ভাগের এক ভাগ রোগী সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, বদহজম, পেটব্যথা ও আলসার হতে পারে। প্রস্রাবের সঙ্গে অথবা অন্য যে কোনো সময় কারণ ছাড়া রক্তপাত, হঠাৎ গলার স্বরের পরিবর্তন, কফের সঙ্গে রক্ত, খাবার গলাধঃকরণে সমস্যা হতে পারে। কখনো কখনো শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও চাকা চাকা হতে পারে। ক্যানসার প্রতিরোধে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য, চর্বি, মিষ্টি, রাসায়নিক খাদ্য উপাদান, রেড মিট, ড্রিংকস পরিহার; অতিরিক্ত ওজন হ্রাস ও নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি আঁশ এবং শস্যদানা জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!