• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সততার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হ্যাপী!


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৬, ২০১৭, ০১:০৬ এএম
সততার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হ্যাপী!

সততার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কেবিন ক্রু হ্যাপী। লন্ডন প্রবাসী এক ব্যক্তির ফেলে যাওয়া সোয়া তিন হাজার পাউন্ড; বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ফেরত দিলেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লন্ডন প্রবাসী শামিম আহমেদ চৌধুরীর টাকা বুঝিয়ে দিলেন বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু কাজী আশরাফ আল কাদের হ্যাপী।

সততার সেই গল্পটি ছিল-
গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০০২ নম্বর ফ্লাইটে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে একজন নারী যাত্রী হ্যাপীকে ময়লাসদৃশ কালো পলিথিন তুলে দিয়ে তা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে অনুরোধ করেন। 

ছোট ওই পলিথিনের প্যাকেট হাতে করে যাত্রীদের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া দৃষ্টিকটু হবে। তাই হ্যাপী তার ইউনিফর্মের ওপরে থাকা জ্যাকেটের পকেটে রেখে দেন, সেটি পরে ফেলে দেবেন ভেবে। কিন্তু কাজের চাপে তা ফেলতে ভুলে যান তিনি। 

বিমানটি ঢাকায় পৌছে ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে। বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজবাসায় ফেরার পর হ্যাপীর মনে পড়ে কালো পলিথিনের ময়লাসদৃশ্য সেই প্যাকেটটির কথা। প্যাকেটটি তুলনামূলক ভারী। শুধু কাগজ বা পলিথিন হলে এ রকম মনে হতো না। কৌতূহল নিয়েই প্যাকেটটি খুলেন। 

পলিথিনের ভেতরে একটি খাকি রঙের খাম। বিস্ময়ে চোখ আটকে যায় খামে। খাম খুলেই চোখ ছানাবড়া, ভেতরে অনেক পাউন্ড। সঙ্গে ব্যবহৃত টিস্যু পেপার। দুটি ভাজে রাখা পাউন্ডগুলো গুনতে থাকেন। সর্বমোট ৩ হাজার ২শ’ ৮৫ পাউন্ড।

কেবিন ক্রু হ্যাপি জানান, পাউন্ড পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। এত টাকা কি করবেন। এর মালিককে কিভাবে খুঁজে পাবেন? তিনি বলেন, ‘পাউন্ডের মালিকের ভাগ্য ভালো যে ওই পলিথিনে টুকুরো কাগজে ‘নিজ’ লেখা লন্ডনের একটি ফোন নম্বর ছিল।’ 

ওই নম্বরে কল দিতেই এক ভদ্রলোক তা রিসিভ করেন। হ্যাপী তার কাছে জানতে চান, দুই একদিনের মধ্যে আপনার পরিচিত কেউ বাংলাদেশ বিমানে লন্ডনে বা লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কি-না? ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তির কণ্ঠে রাজ্যের বিস্ময়। 

তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আমি বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে এসেছি।’ হ্যাপী তারপরই জানতে চান, ‘আপনার কিছু হারিয়েছি কি-না।’ ওই ব্যক্তি জানান, তার প্রায় ৪ হাজার পাউন্ড হারিয়েছে। তা পলিথিনে মোড়ানো একটি খামে ছিল।

পাউন্ডের অঙ্ক না মেলায় সঠিকভাবে হিসেব করে পাউন্ডের অঙ্ক জানাতে অনুরোধ করেন হ্যাপী। পরবর্তীতে ফোনে ওই ব্যক্তি জানান, সেখানে ৪ হাজার পাউন্ড ছিল। কিছু খরচ করার পর ৩ হাজার ২শতাধিক পাউন্ড ছিল। এর মধ্যে আলাদা একটি ভাজে তিনটি ২০ পাউন্ড করে ৬০ পাউন্ড ছিল। এতে টিস্যু পেপার ও একটি সাদা কাগজে বাংলায় লেখা তার ফোন নম্বরটি রয়েছে। 

তারপরই হ্যাপী নিশ্চিত হন এই পাউন্ডের মালিক ওই ব্যক্তি-ই। তিনি লন্ডন প্রবাসী শামীম আহমেদ চৌধুরী। কথাবর্তার একপর্যায়ে তার পাউন্ডগুলো নিতে অনুরোধ করেন হ্যাপী। তখনও শামীম বিশ্বাস করতে পারেননি, হারানো পাউন্ডগুলো তিনি ফিরে পাচ্ছেন!

প্রবাসী শামীম বলেন, ‘পাউন্ডগুলো হারিয়ে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কেবিন ক্রু হ্যাপী সততার পরিচয় দিয়ে আমাকে চিরঋণী করেছেন। এ রকম সৎ মানুষ অনেক উন্নত দেশেও পাওয়া দুষ্কর’ বলে জানান তিনি। লন্ডন প্রবাসী শামীম আহমেদ চৌধুরী হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দির বাসিন্দা। 

কেবিন ক্রু হ্যাপী রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নূরজাহান সড়কের বি-২০ নম্বর বাড়িতে থাকেন। প্রয়াত কাজী নুরুল কাদের ও রাশেদা কাদেরের ছেলে তিনি। বরেণ্য সাংবাদিক প্রয়াত এবিএম মূসার ভাগ্নে হ্যাপী জানান, নৈতিক দায়িত্ব থেকেই তিনি পাউন্ডগুলো ফেরত দিয়েছেন। এই মানসিকতা থেকেই মালিককে খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!