• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তানকে বাঁচাতে নির্বাক দাঁড়িয়ে বাবা


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ১৮, ২০১৭, ১২:০৩ পিএম
সন্তানকে বাঁচাতে নির্বাক দাঁড়িয়ে বাবা

অসুস্থ হয়ে বাবার কোলে নির্জিব হয়ে পড়েছে শিশুটি

ঢাকা: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নীপিড়ন থেকে বাঁচতে শত শত পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছেছে তিন দিন আগে। কিন্তু এখনো সীমান্তের এ পাড়ে আসতে দেয়া হয়নি মামুনুরদের। এ কে তো বৈরি আবহাওয়া সাথে পেটের ক্ষুধা। বৃষ্টি, অনাহার আবার রোদ এমন সব বৈচিত্রতার কারণেই কক্সবাজার পালংখালি সীমান্তে আটকে দেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা সংকটাপূর্ণ হয়ে পড়েছে। 

তাদের মধ্যে কয়েকজন তরুণকে দেখা গেল বৃদ্ধা পিতা-মাতাকে কাঁধে করে নিয়ে ছোটাছুটি করছেন চিকিৎসার আশায়। এক জায়গায় জড়ো হয়েছেন কিছু পিতামাতা। তাদের কোলে কয়েকটি শিশু, সবাই অসুস্থ।

এদের মধ্যে মামুনুর নামে একজন বছর দুয়েকের একটি শিশুকে কোলে নিয়ে বিজিবির সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবার চেষ্টা করছিলেন। শিশুটি নির্জিব হয়ে পড়েছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

সন্তানের জন্য দিকবিদিক ছোটাছুটি করে ক্লান্ত তিনি। নির্জিব শিশুটিকে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা মামুনুর। তার চোখে যেন রাজ্যের হতাশা। নিজে বাঁচবে কিনা সে চিন্তা নাকের, শত রক্তর কনায় জন্মনেয়া শিশুকে তো আর এভাবে মরতে দেয়া যায় না।

মামুনুর বিবিসির প্রতিবেদককে বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে শুকিয়ে তার শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন তার ডায়রিয়ার লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছে। সে নির্জিব হয়ে পড়েছে।

তার পাশে আরো দুজন মহিলা শিশু কোলে দাড়িয়ে ছিলেন, তাদেরও একই অবস্থা। নির্জিব। পানিশুন্যতার লক্ষ্মণ স্পষ্ট। একজন গর্ভবতী মায়ের সাথে কথা হল। তার পা ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। বলছিলেন, ৫ দিন ধরে হাটছেন তিনি। আর পারছেন না। পুরো একটি দিন না খেয়ে পার করেছেন। চার মাসের গর্ভবতী তিনি।

আরেক তরুণকে দেখা গেলো তার স্ত্রীকে ধরে এগোনোর চেষ্টা করছেন। স্ত্রীটি স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে সংজ্ঞা হারিয়েছেন। জুবায়েরা নামের এক মহিলা তিনটি নগ্ন শিশুকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তা ধরে এগোচ্ছিলেন।

একটি কোলে, বাকি দুটো তার হাতে ধরা। তাদের সবারই কাদায় পানিতে মাখামাখি অবস্থা। কিচ্ছুক্ষণ আগে এখানে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। এখন তালুফাটা রোদ।

জুবায়েরা বলছিলেন, দুমাস আগে তার স্বামীকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। বনে জঙ্গলে কাঠ কুড়িয়ে চলতো এতদিন। এখন আর পারছেন না। তাই কোলের শিশুদের নিয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় তিনি চলে এসেছেন।

সীমান্ত পেরিয়ে সোমবার (১৬ অক্টোবর) তিনি বাংলাদেশে এসে ঢুকেছেন। কিন্তু সেখানেই তাদের আটকে দিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

তিনি আরো বলছিলেন, তিনি ও তার সন্তানেরা দু’দিন ধরে কিছু খাননি। মাথার উপর ছাউনি নেই। সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদেরকে শূন্যরেখা বরাবর আটকে রেখেছে।

বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, শরনার্থী শিবিরগুলো থেকে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এবং যাচাই বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে এখানেই থাকতে হবে। কতদিন তাদের সেখানে থাকতে হবে স্পষ্ট নয়।

জাতিসংঘ শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এই যাচাই বাছাইয়ের কাজ দ্রুত শেষ করবার আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য জরুরী সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এখানে এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে। তারা অতি অসুস্থ মানুষগুলোকে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে ডেকে এনে চিকিৎসা দিচ্ছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!