• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাস নির্মূলে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় চাইবে ঢাকা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬, ০৯:৩০ পিএম
সন্ত্রাস নির্মূলে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় চাইবে ঢাকা

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপ

বাংলাদেশে বিগত দু-তিন বছরে মুক্তমতের লেখক-ব্লগারসহ একাধিক বিদেশি উন্নয়নকর্মী খুন হয়েছেন। গত জুলাইয়ে গুলশানের একটি ক্যাফেতে ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত সন্ত্রাসী হামলা। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের কাছে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।

এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কারণেই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপে গুরুত্ব পাবে জঙ্গিবাদ উত্থানের বিষয়টি। সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে ওয়াশিংটনের কাছে আগাম গোয়েন্দা তথ্য চাইবে ঢাকা। খোলসা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী অংশীদারত্ব তহবিলের (সিটিপিএফ) বিষয়টি, যেখানে অনেক আগেই যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ।

রবিবার (২ অক্টোবর) পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ঢাকায় পঞ্চম নিরাপত্তা সংলাপটি শুরু হওয়ার কথা। যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকা-ওয়াশিংটন কেউই এ সংলাপের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গত আগস্টে ঝটিকা সফরে ঢাকা আসেন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের তৎপরতা আছে। কাজেই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করলে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী এই সংগঠনটি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতায় আঘাত হানবে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড এবং নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে।

জন কেরির এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। এদের দমনে প্রয়োজনে ওয়াশিংটনের সহায়তা নেবে ঢাকা। এ সময় গুলশান হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী তামিম চৌধুরী ও তার সহযোগীদের নির্মূল করার উদাহরণ টেনে ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র ছাড় নয়।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন নিরাপত্তা সংলাপে মূলত জঙ্গিবাদ নির্মূলের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এ ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের কাছে ঢাকা কী ধরনের সহযোগিতা চায় তা লক্ষণীয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশেষজ্ঞ আছে। ওয়াশিংটন প্রযুক্তিগতভাবেও অনেক উন্নত। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাস বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রস্তাব দিতে পারে বাংলাদেশ। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে অনেক সময়ই আগাম তথ্য থাকে। ঢাকা প্রস্তাব দেবে সেই তথ্য বিনিময়ের, যাতে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ধরতে সুবিধা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিরাপত্তাসংক্রান্ত সহযোগিতা নেয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ওয়াশিংটন-ঢাকা একসঙ্গে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে কাজ করছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ক্রমেই প্রকাশ্য হবে। এ বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিকসংক্রান্ত ব্যুরোর কর্মকর্তা ডেভিড আই মেকবি (David I. McKeeby) এক বার্তায় এই প্রতিবেদককে জানান, বিশ্বব্যাপী চরমপন্থা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী আইএস (দায়েস), আল-কায়েদাসহ এ ধরনের সব গোষ্ঠী সম্পর্কে দু’দেশ অবগত আছে। এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কাজ করতে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্মত হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী অংশীদারত্ব তহবিলে (সিটিপিএফ) বাংলাদেশ যোগ দিয়েছে। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সিটিপিএফ দু’দেশকেই সহায়তা করবে। সিটিপিএফের মাধ্যমে নিরাপত্তা ইস্যুতে ঢাকা-ওয়াশিংটন আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে পারবে।

ডেভিড আই মেকবি জানান, দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্কের অন্যতম মূল বিষয় নিরাপত্তা। নিরাপত্তাসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র মূলত তিনটি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এই খাতগুলো হচ্ছে সমুদ্র নিরাপত্তা (maritime security), শান্তিরক্ষা কার্যক্রম এবং মানবতামূলক (humanitarian response) ও দুর্যোগ প্রস্তুতি (disaster preparedness)। তিনি আরো জানান, সমুদ্র নিরাপত্তা খাত হচ্ছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মূল স্তম্ভ (core pillar)। যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সাল থেকে সমুদ্র নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে। সমুদ্র নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ দ্রুতগতিসম্পন্ন ৩৪টি ছোট বিশেষ জাহাজ (Defender class patrol and ambulance boats) দিচ্ছে। যা সমুদ্র ও বন্দর অঞ্চল নিরাপত্তার পাশাপাশি জরুরি অনুসন্ধান ও উদ্ধার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহলসহ নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ৭০ শতাংশ চুরির ঘটনা কমেছে উল্লেখ করে ডেভিড আই মেকবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগ বাংলাদেশকে সন্ত্রাস নির্মূল বিষয়ে প্রয়োজনীয় হাতেকলমে প্রশিক্ষণও দেবে। যাতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও বাস্তব ভিত্তি বাড়ে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই কার্যক্রমে বাংলাদেশ যাতে আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই খাতেও বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। বাংলাদেশকে নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে মানবতামূলক ও দুর্যোগ প্রস্তুতি মোকাবিলা। এই খাতে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় সিডরের মতো ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে শক্তিশালী করতে সহায়তা দিচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ও সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক আহমেদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। সন্ত্রাস ও চরমপন্থা নির্মূলে ঢাকা-ওয়াশিংটন একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা আগেই দিয়েছে। আসন্ন নিরাপত্তা সংলাপে সন্ত্রাস ও চরমপন্থা নির্মূলে দু’দেশের সহযোগিতা আরো বিস্তৃত হবে। তিনি আরো বলেন, মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা টানাপড়েন চলছিল। তবে এখন ভালো সম্পর্ক রয়েছে। জন কেরির গত আগস্টে ঢাকা সফরই প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব রয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল ঢাকায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম যৌথ সংলাপে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর পালাক্রমে ঢাকা ও ওয়াশিংটনে এই সংলাপ আয়োজিত হয়ে আসছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটনে সর্বশেষ সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!