• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবার দৃষ্টি বকশীবাজারে


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮, ১০:১১ এএম
সবার দৃষ্টি বকশীবাজারে

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের পাল্টাপাল্টি বাগযুদ্ধ রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। ‘নাশকতার আশঙ্কায়’ দেশজুড়ে সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই জের হিসেবে সকলের দৃষ্টি এখন আদালতের দিকে। মামলার ফল জানতে উৎসুক হয়ে আছে গোটা দেশ।

মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আজ সকাল ১০টার দিকে তার গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে বকশীবাজারের অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানান, খালেদা জিয়া সকাল ১১টার দিকে বকশীবাজারের বিশেষ জজ আদালতে হাজির হবেন। সকাল ১০টার দিকে তিনি বাসভবন থেকে রওনা হবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, চেয়ারপারসন দলের সিনিয়র নেতাদের তার সঙ্গে থাকতে বলেছেন। আইনজীবীরা সরাসরি আদালত প্রাঙ্গণে যাবেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেত্রীর গাড়িবহরের সঙ্গে যুক্ত হবেন। তারা শান্তিপূর্ণভাবে গাড়িবহর ঘিরে এগোতে থাকবেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতারা নিজ নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অবস্থান করবেন।

বিএনপির ওই নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে তারা নেতাকর্মীদের চেয়ারপারসনের গাড়িবহরের ধারেকাছে আসতে দেবে না। বরং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাসা থেকে কর্ডন করে আদালতে নিয়ে যাবে। তিনি জানান, চেয়ারপারসন যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।

দফতর সংশ্লিষ্ট এক নেতা জানিয়েছেন, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গোপনীয়ভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের কৌশল অবলম্বন করে থাকতে বলা হয়েছে।

মামলায় গত ২৫ জানুয়ারি দুদক ও আসামিপক্ষের কৌঁসুলিদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে পঞ্চম বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেন। তারপর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বাগযুদ্ধ শুরু হয়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির অঙ্গন। সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, সতর্ক অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে। গতকাল থেকে রেল, সড়ক ও নৌপথসহ সর্বত্র তল্লাশি চালানো হয়। গতকাল দুপুরের পর রাজধানীতে গণপরিবহন কমতে শুরু করে। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। তার আশঙ্কা, সরকার আদালতকে প্রভাবিত করে খালেদা জিয়াকে সাজা দেবে। তবে আদালত স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারলে তিনি বেকসুর খালাস পাবেন।

গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গতকাল বিএনপির কার্যালয়সহ আশপাশের সড়কেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে।

কার্যালয়ে ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রেখেছে। এতে তারা বাইরে বের হতে পারছেন না। পাশাপাশি বাইরে থেকে নেতাকর্মীরা ঢুকতে পারছেন না।

গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কোনো ধরনের সমাবেশ ও মিছিল করা যাবে না। ভোগান্তি সৃষ্টি না করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে কোনো বাধা নেই। সহিংসতা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এর আগে গত মঙ্গলবারই ডিএমপি খালেদার মামলার রায়ের দিন ভোররাত থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।
এছাড়া সচিবালয়, জাতীয় সংসদ ভবন, বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জনমনে নানা শঙ্কা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকা প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। এতে খালেদা জিয়া ও তার পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।

অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা  জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মোমিনুর রহমান। এদের মধ্যে তারেক, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মোমিনুর পলাতক। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এটিসহ ৩৬টি মামলা চলছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!