• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাবেশ প্রশ্নে মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ৫, ২০১৬, ১১:০৯ এএম
সমাবেশ প্রশ্নে মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি

আসছে ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির সমাবেশ প্রশ্নে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৪১ বছর আগের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে তাদের অনড় অবস্থান ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতির মাঠে আবারও উত্তেজনা সঞ্চার করছে।

এরই মধ্যে ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ৮ নভেম্বর রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে সমাবেশ করে রাজনৈতিক শক্তির জানান দিতে চায় বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপির এই সমাবেশ যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কার্যত দুই রাজনৈতিক দল রাজধানীতে সমাবেশ ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছে।

কয়েক দিন আগে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে রাজধানীতে সমাবেশের ডাক দেয়া বিএনপিকে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে দেশের চলমান রাজনীতিতে প্রথম উত্তেজনা বাড়ান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুল-উল-আলম হানিফ। এরপর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও দলের আরেক যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেয়া বক্তব্যে দেশের ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতির মাঠে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দলের এসব নেতা রাজধানীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, ৭ নভেম্বর উপলক্ষে রাজধানীতে যেকোনো মূল্যে সমাবেশ করবেই বিএনপি। এমনকি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে তাদের কেউ কেউ বলেন, সমাবেশ হবে ‘পারলে ঠেকাও’।

এই যখন গত কয়েক দিনের দুই দলের রাজনৈতিক মুখোমুখি অবস্থান। তখন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে বিএনপির আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দফতরে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই সমাবেশকে ঘিরে কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে যথাযথ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থার পক্ষ থেকে বিএনপির আবেদনের বিষয়টি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ, নেয়া হচ্ছে নানা খোঁজখবর।

এদিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণার পর বিএনপির পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে করা আবেদনের বিষয়ে এখনো কোনো জবাব পায়নি দলটি। গতকাল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের সমাবেশ সফল করতে প্রশাসন যত শিগগির সম্ভব অনুমতি দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, ৮ নভেম্বর অনুমতি দেবে, না দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, শেষ পর্যন্ত অনুমতি না পাওয়া গেলে, তাৎক্ষণিকভাবে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

অন্যদিকে ৭ নভেম্বর বিএনপির ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, কিসের বিপ্লব দিবস। এটা হত্যা দিবস। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় তিনি এ কথা বলেন।

এ ছাড়া ৭ নভেম্বরকে সৈনিক হত্যা দিবস বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, এটি কোনো বিপ্লব ও সংহতি দিবস নয়। গত বুধবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত শিখা চিরন্তন-এ প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এর আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ গত সোমবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বরের ঘটনা আড়াল করতে সিপাহী বিপ্লবের নামে পঁচাত্তরের ঘাতকগোষ্ঠী তথাকথিত বিপ্লব দিবস পালন করে। এই দিন তারা হাজারো সেনা সদস্যকে হত্যা করে। এই সেনা হত্যাকারীদের মাঠে নামার কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। বিপ্লবের নামে এই ঘাতকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

৭ নভেম্বর উপলক্ষে বিএনপির সমাবেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আমরা অবশ্যই রাজধানীতে সমাবেশ করব। ইতিমধ্যে এই সমাবেশ সফল করতে যেসব প্রস্তুতি নেয়া দরকার, তা আমরা অনেকাংশে শেষ করেছি। এই সমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। এই সমাবেশ থেকে মূলত আমাদের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের ‘হারানো গণতন্ত্র’ পুনরুদ্ধারের ডাক দেবেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে যেসব খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে সেসবের চিত্র দেশবাসীর কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি রামপাল প্রকল্পের মতো বর্তমান সরকারের নেয়া নানা দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারেও সমাবেশে বিএনপি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পালাবদলের একপর্যায়ে সেনানিবাসে বন্দী হন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। এরপর এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একই বছরের ৭ নভেম্বর তিনি মুক্ত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর বিএনপি গঠন করেন। আর এর চার দিন আগে ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর চার ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বরকে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পালন করে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে। আর আ. লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাসদ দিনটি পালন করে ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!