• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সময় চাওয়া বিব্রতকর ছিলো: অ্যাটর্নি জেনারেল


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১২, ২০১৭, ০২:৪৯ পিএম
সময় চাওয়া বিব্রতকর ছিলো: অ্যাটর্নি জেনারেল

ঢাকা: নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরীর শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে আদালতের কাছে আমার বার বার সময় চাওয়া ছিলো বিব্রতকর।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, যেহেতু শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মাঝখানে আমাকেই অবস্থান নিতে হয়। যাকে বলে সেতুবন্ধন। সুতরাং সুপ্রিমকোর্টের একটি আগ্রহ ছিল এটা এতো দিন হচ্ছে না কেন। আর বারে বারে আমাকে সময় নিতে হয়েছে। সেটা আমার জন্য নিশ্চয় বিব্রতকর ছিল। তিনি বলেন, গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে আমার সেই বিব্রতকর অবস্থার সমাপ্তি ঘটলো।

মাহবুবে আলম বলেন, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৭ রাষ্ট্রপতি প্রণয়ন করেছেন । গতকাল এটির গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এই বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়ে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, বিচার বিভাগীয় কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়ীত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ, কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান, ছুটি মঞ্জুরিসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির কর্তৃক প্রদত্ত হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই গাইড লাইন অনুযায়ী সংবিধানের ১১৬ অনুযায়ী জুডিশিয়াল সার্ভিস রুল বিধিমালা প্রণয়ন হয়েছে। এর বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থাৎ অভিযোগ, অনুসন্ধান কিভাবে হবে তারপর এটার অনুসন্ধানের পরে এদের সাময়িক বরখাস্ত কিভাবে হবে এবং এদের অপরাধের তদন্ত কিভাবে হবে সব ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে এই বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন স্তরে পদক্ষেপের ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এটি বিস্তারিত বলা হয়েছে গেজেটে। এছাড়াও যদি সুপ্রিম কোর্ট মনে করে স্ব:প্রণোদিত হয়ে কোনো অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে তারা রাষ্ট্রপতিকে জানাতে পারবেন এবং এই পরামর্শের ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।

তিনি বলেন, কাজেই এটা এখন নিম্ন আদালতের যারা বিচারক আছেন বা যারা বিচার সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত আছেন তাদের শৃঙ্খলার ব্যাপারে, তাদের অ্যাডমেনিস্ট্রেটিভ অ্যাকশনের ব্যাপারে কোনো রকম বাঁধা রইলো না।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের অভিযোগগুলোর তদন্ত এবং তার ফয়সালা কিভাবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটার ফয়সালাটা হবে রাষ্ট্রপতির নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের দ্বারা। রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন বা তিনি যদি জ্ঞাত হন যে, অসাদাচরণ হচ্ছে তাহলে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং দণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শের বিষয়ে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্নিত আছে। সেটারই প্রতিফলন এই বিধিমালায় ঘটেছে। মাহবুবে আলম বলেন, রাষ্ট্রপতি যে কোন পদক্ষেপই নেন না কেন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই হবে। এটা স্পষ্টভাবে বলা আছে, যখন কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হবে, কারো বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া দরকার, অভিযোগ অনুসন্ধান করা দরকার বা বিচার বিভাগীয় তদন্ত দরকার সেখানেও রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হবে তখনও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

বিচার বিভাগের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব ছিল এই গেজেটের মাধ্যমে তার অবসান হলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেছেন, কাজেই আমি আর কিছু বলতে চাই না। তিনি নিজেই বলেছেন কেন এতো দিন হয়নি।

গেজেট প্রকাশ হওয়ায় আপনি ভারমুক্ত হয়েছে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই। যেহেতু শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মাঝখানে আমাকেই অবস্থান নিতে হয়। যাকে বলে সেতুবন্ধন। সুতরাং সুপ্রিমকোর্টের একটি আগ্রহ ছিল এটা এতো দিন হচ্ছে না কেন। আর বারে বারে আমাকে সময় নিতে হয়েছে। সেটা আমার জন্য নিশ্চয় বিব্রতকর ছিল। আমার সেই বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হলো।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগসহ অন্যসব কিছুই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন হয়, এক্ষেত্রে কি বলা যায় যে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ শাসন করতে পারবে এবং এর ফলে মাসদার হোসেন মামলার মূল স্পিরিট ঠিক থাকলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, তা হবে কেন? একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি কোনো রকম অভিযোগ আসে এবং তার যদি বিচার করার প্রয়োজন হয় আর তা যদি রাষ্ট্রপতি নিজে নিজেই করে ফেলতেন তাহলে বলা যেখানে সেখানে বিচার বিভাগকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। তা তো করা হচ্ছে না। যাই করা হোক না কেন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে করা হবে।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচার বিভাগকে যে উচ্চতায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন সেটি এই ‍শৃঙ্খলাবিধির কারনে হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি বলেন, এটা কোনো উচ্চতা না। সংবিধান হলো সবার উপরে। সংবিধান অনুযায়ী সব কিছু হতে হবে। একজন ব্যক্তির ইচ্ছাই বড় না। ব্যক্তি থাকবে না, ব্যক্তি মারা যাবে। সংবিধান থাকবে। কোনো ব্যক্তি যদি মনে করেন তিনি সংবিধানের চেয়ে বেশি বোঝে সেটা কিন্তু ভুল।

এই গেজেটে কোনো রকম অসঙ্গতি থাকলে সে বিষয়ে কি করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অসঙ্গতি থাকার কোনো প্রশ্ন আসে না। তার কারণ সু্প্রিমকোর্টের সঙ্গে আইনমন্ত্রী বসেছেন এবং আমি যতটুকু জানি তাদের দেখিয়েই এগুলো করা হয়েছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!