• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারকে জিম্মি করা মন্ত্রীর বহিষ্কার দাবি


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১, ২০১৭, ০৭:১৬ পিএম
সরকারকে জিম্মি করা মন্ত্রীর বহিষ্কার দাবি

ঢাকা: দেশবাসীকে হতবাক, বিস্মিত ও সবশেষে চরম দুর্ভোগে ফেলে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের ইন্ধনদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দলের ভেতরে বাইরে। মন্ত্রী পরিষদ থেকে শাজাহান খানতে বাদ দেয়ার দাবিও উঠেছে।

সরকারি দলের নেতারা বলছেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘট ডাকা একদিকে আদালত অবমাননা করা হয়েছে। অপরদিকে, গত দুদিনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দেশবাসী। শুধু তাই নয়, ধর্মঘটের নামে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিবহনের ওপর সহিংস হামলা চালানো হয়েছে। কোথাও কোথাও ক্ষুদ্র পরিবহন চালকদের নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। এসব ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি বিরোধী পক্ষকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নৌমন্ত্রীর ওপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা সহিংতার ঘটনায় মামলা দায়েরের পক্ষে মত দিয়েছেন। এসব ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঝড় উঠেছে। মন্ত্রী পরিষদ থেকে নৌমন্ত্রীকে বাদ দেয়ার দাবিও তোলা হয়েছে ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে।  

ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সারাদেশে যখন শান্তি বিরাজ করছে, তখন রাজধানী গাবতলীতে রাতভর সহিংসতা হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেও অরাজকতা হয়েছে। সরকারের একজন মন্ত্রীর ইন্ধনে এ ধরনের জনবিরোধী কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না।     

ধর্মঘটের কারণে চরম জনদুর্ভোগের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি (শাজাহান খান) একই সঙ্গে মন্ত্রী ও শ্রমিকনেতা। তাই শ্রমিকদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু শ্রমিকেরা যে সহিংসতা করছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত থাকুক, এটা সমর্থনযোগ্য নয়।’

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং দলটির মুখপাত্র হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘এই ধর্মঘট অযৌক্তিক এবং আদালত অবমাননা। বিশেষ কারও জন্য ভিন্ন আইন রাষ্ট্র করতে পারে না।’

নৌমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতারা। তারা শাজাহান খানের তীব্র সমালোচনা করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন।

ছাত্রলীগের সহসভাপতি আহসান হাবিব লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার হাতে দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন দালাল শ্রেণির শ্রমিক নেতারা দেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ব্যস্ত। ওই সব দালাল শ্রমিকনেতাদের বলছি, দেশের পরিবেশ খারাপ করবেন না।’

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর রক্তের দাগ আপনার হাতে এক সময় ছিল মাননীয় মন্ত্রী। আমরা সবাই ভুলে যাচ্ছিলাম। আপনি আবার শেখ হাসিনার শান্তির দেশে অবরোধ ডেকে মনে করিয়ে দিলেন আপনার অতীত।’

নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক রফিকুল ইসলাম। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শাজাহান খানকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ দেয়া হোক। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হোক। তাহলে বাংলাদেশে এ ধরনের অবৈধ আন্দোলন ও ধর্মঘট বন্ধ হবে।’

বুধবার (১ মার্চ) পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের কিছু আগে রাজধানীর মিরপুর স্টাফ কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি তো আমরা চলতে দিতে পারি না।’ সহিংতার ঘটনায় মামলা হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মামলা হবে না কেন? পুলিশের একটা রেকার ভেঙে ফেলেছে। আজকে একটা জিপের ওপর আক্রমণ করতে গিয়েছে। সেই সময় আপনারা দেখেছেন একজন শ্রমিক আহত হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করছে।’

প্রসঙ্গত, সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের মামলায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাসের চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এই রায়ের প্রতিবাদে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা, পরে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় আঞ্চলিকভাবে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক শ্রমিকরা। এরই মধ্যে সাভারে ট্রাকচাপায় এক নারী নিহতের দায়ে চালকের বিরুদ্ধে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। এরপরই ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে আকস্মিক ধর্মঘট ডাকা হয়।

এক মন্ত্রীতে জিম্মি পুরো সরকার!
নৌমন্ত্রীর সরকারি বাসায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত!

সোনালীনিউজডটকম

Wordbridge School
Link copied!