• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি দলকে ছাড় দেবে না বিএনপি


এমএ ইউসুফ নভেম্বর ১৭, ২০১৬, ০৩:১৬ পিএম
সরকারি দলকে ছাড় দেবে না বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২২ ডিসেম্বর। এটিই হবে প্রথমবারের মতো কোনো সিটি করপোরেশনে রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচন। রাজধানীঘেঁষা ঘটনাবহুল এই জনপদে ভোটের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই রাজনীতির মাঠে শুরু হয়ে গেছে নানা কথাবার্তা। ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারি দলকে কোনোরূপ ছাড় দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি।

তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন চলতি মাসের ২৪ নভেম্বর। বর্তমান সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী গতবার আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে নির্বাচন করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। এবার প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি দলের সমর্থন পাবেন? এদিকে গতবার একেবারে শেষ মুহূর্তে ভোটের লড়াই থেকে সরে যাওয়া বিএনপি এবার কি ভোটের লড়াইয়ে থাকবে- এমন প্রশ্নের জবাবে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারি দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়বে তারা।

এ প্রসঙ্গে একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিতে চায় বিএনপি। দুই-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

দলের নেতারা আরো জানান, বিএনপি ধরেই নিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনেরা ফল নিজেদের পক্ষে ‘ছিনিয়ে নেবে’। তারপরও বিএনপি এ নির্বাচনে থাকতে চায়, কারণ এতে আরো বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। আর নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিও জোরালো হবে।

বিএনপি নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে থাকতে চায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দলের জেলা কমিটি পুনর্গঠনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান গতকাল (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাস করে। গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কীভাবে কেন্দ্র দখল করা হয়েছে, তা দেশবাসী দেখেছেন। তারপরও শত প্রতিকূলতার মাঝে বিএনপি স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে ছিল, তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে থাকা, না-থাকা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে নই। কারণ বর্তমান নির্বাচন কমিশন হলো মেরুদণ্ডহীন। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন অতীতে করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। তারপরও দল শেষ পর্যন্ত সিটি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমার তো বিরোধিতার কিছু নেই। এছাড়া নিজের প্রার্থিতার প্রসঙ্গে তৈমুর বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও তিনি নিজে প্রার্থী হতে চান না। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে প্রার্থী দেবে, তার পক্ষে তিনি কাজ করবেন।

অন্যদিকে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার অনাগ্রহী হলেও বিএনপির শহর কমিটির নেতা এটিএম কামাল এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে তিনি নিজের ইচ্ছার কথা খোলাখুলি বলেছেন। এটিএম কামাল বলেছেন, স্থানীয় নেতাকর্মীরা চাইছেন আমি যেন সিটি নির্বাচনে অংশ নিই। এখন আমাদের দলের চেয়ারপারসন যদি মনে করেন এই নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া দরকার, তাহলে ভোটের লড়াইয়ের জন্য আমি প্রস্তুত আছি।

এদিকে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচন ছিল নির্দলীয়। ওই নির্বাচনে নাগরিক সমাজের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে এক লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। অন্যদিকে ওই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। কিন্তু ভোট গ্রহণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি ‘দলীয় সিদ্ধান্তে’ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেও এর আগে-পরে প্রায় দেশের সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। সারাদেশে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। আর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছিল। তবে এই তিন সিটিতে ভোটের দিন দুপুরে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়।

এর আগে ২০১৩ সালের জুনে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে এবং একই বছরের জুলাইয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!