• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সহায়ক সরকার নিয়ে ‘অন্ধকারে’ বিএনপি!


সোনালী বিশেষ জুলাই ২৮, ২০১৭, ১০:৪৩ পিএম
সহায়ক সরকার নিয়ে ‘অন্ধকারে’ বিএনপি!

ঢাকা : দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু এখন ‘সহায়ক সরকার’। এই ইস্যুতে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, সহায়ক সরকারের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।

কিন্তু এই সহায়ক সরকারের রূপরেখা কি হবে, এখনও পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়নি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, লন্ডন সফররত দলের চেয়ারপারসন দেশে ফিরেই সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন।

তারপরেও বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক সচেতন প্রতিটি মানুষের মনেই প্রশ্নের উদয় হচ্ছে, বিএনপি’র সহায়ক সরকারের সংজ্ঞাটা কী, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে কি ধরনের সমঝোতা চায় দেশের অন্যতম বড় এই দলটি। শুধু তাই নয়, বিএনপির ভেতরেই বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের কাছেও সহায়ক সরকারের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও এরই মধ্যে দলের একাধিক সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সময় বলেছেন, সহায়ক সরকার ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখতে নানা কৌশল নেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে বিএনপির অবস্থান সে কৌশলেরই অংশ।

চাপে রেখে সরকারের কাছ থেকে যতটুকু আদায় করা যায়, সে পথে হাঁটবে দলটি। সে লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রশ্নে সোচ্চার বিএনপি। এ প্রশ্নে সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করাতে চায় দলটি।

এরই মধ্যে সহায়ক সরকার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনকালে একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজ করছি। তাই এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাই না।’  অর্থাৎ যে সহায়ক সরকারের রূপরেখাই এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি, সেই সরকারের দাবি মানানোর জন্য বিএনপির হাঁকডাকের অন্ত নেই!

অন্যদিকে এই রূপরেখাবিহীন সরকার গঠনের দাবি তোলার আসল রহস্য মওদুদ আহমদ নিজেই বলেছেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন তো বলেই দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না।’ আসল কথা এটাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সহায়ক সরকার একই দাবির দুই নাম মাত্র।

জানা গেছে, বিএনপির আসল উদ্দেশ্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তিনি ক্ষমতা থেকে সরে গেলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সহায়ক সরকার যে নামেই একটা সরকার গঠিত হোক না কেন, বিএনপি তা মেনে নেবে। তখন আর সেই সরকারের কোনো রূপরেখা দরকার হবে না। মুখে তারা যতই বলুন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তারা সহায়ক সরকার চান, তাদের মনের ইচ্ছা, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

বিএনপি নেতাদের মতে, আওয়ামী লীগ আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচন করতে চাইছে। গত ১৬ জুলাই নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোড়ম্যাপ সেই ইচ্ছারই প্রতিফলন। যাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারে এ বক্তব্যেই বিষয়টি পরিষ্কার বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইসির ঘোষিত রোডম্যাপে জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়নি। আবারো আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার নীল নকশার পুরনো কায়দা এটি।

তিনি বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেষ্টা চালিয়ে যাব। সরকারকে আলোচনার টেবিলে আনার, সমঝোতায় রাজি করানোর কোনো ঘাটতি আমাদের পক্ষ থেকে থাকবে না।

এদিকে, বছরখানেক আগেই বিএনপির হাইকমান্ড থেকেও মাঠের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা এখন পর্যন্ত জানেন না, আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে। এছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কী না, তা নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আছে।

আবার সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের ধরন কেমন হবে, তা নিয়েও অন্ধকারে আছে দলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির মতো যদি সহায়ক সরকারের দাবিতে হওয়া আন্দোলন ব্যর্থ হয়।

তবে এর পরিণতি নিয়েও উদ্বিগ্ন নেতাকর্মীদের কেউ কেউ। তবে অনেকের আশা, এবার আর ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন হবে। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে এবং তা নিরেপক্ষ ও অবাধ হলে বিএনপি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করতে পারবে।

সংবিধান মতে, একটি সংসদের প্রথম অধিবেশনের ঠিক পাঁচ বছর পর ওই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়। ক্ষমতাসীনরা বলছেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ফলে ২০১৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর কিংবা ২০১৯ এর জানুয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু বছর দেড়েক বাকী থাকতেই দেশের সর্বত্র আগামী নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে কথা চালাচালি শুরু হয়েছে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!