• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘সহায়ক সরকার’ পেতে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২১, ২০১৭, ০৩:৩৪ পিএম
‘সহায়ক সরকার’ পেতে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি

ঢাকা : আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে দ্বিমত বিএনপিতে। দলটিতে দুই ধরনের মত এখন দৃশ্যমান। একটি পক্ষ বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমে ন্যূনতম সহায়ক পরিবেশ তৈরি হলে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যেতে পারে দলটি।

আবার অন্যপক্ষ বলছে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। সেই নির্বাচন হতেও দেবে না বিএনপি। বিএনপির ভেতর-বাইরে এমন প্রস্তুতি দেখেই সরকারের নেতারাও বলছেন, নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেবে বিএনপি। যদিও নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের প্রস্তাব নিয়ে আন্দোলন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

বিএনপির গত কয়েক মাসের রাজনীতির পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলের নেতারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন। দলটির নেতারা আওয়ামী লীগের প্রভাবমুক্ত একটি দল-নিরপেক্ষ বা নির্বাচনকালীন সরকার চায়।

এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেওয়ার কথাও বলেছেন। সেই রূপরেখা বাস্তবায়নে দলটি শিগগিরই রাজপথে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে নির্বাচন প্রস্তুতির কাজ করছেন বলে শোনা যায়। একসঙ্গে আন্দোলন এবং ৩০০ আসনে মনোনয়ন নিয়ে গত তিন -চার মাস থেকেই ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। জানা যায়, আসনভিত্তিক মনোনয়নের জন্য দুই থেকে তিনজনকে টার্গেট করে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আন্দোলন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তালিকাও তৈরি করছেন তিনি। যাতে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা যায়।

গত নির্বাচন ঠেকানোর পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও এবার যেন সে রকম না হয়, এমন চিন্তা মাথায় নিয়েই পরিকল্পনা আঁটছেন তারেক রহমান। বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের এমন পরিকল্পনা কতটুকু বাস্তব রূপ পায়, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তারেক রহমান নির্বাচন পরিকল্পনা নিয়ে আগালেও দলের প্রভাবশালী অধিকাংশ নেতা শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি নন।

যদিও দলের অপর একটি অংশ মনে করে, নির্বাচনের পরিবেশ পেলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেও নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি। কিন্তু দলের কট্টর অংশের নেতারা কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমে বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে যদি বিএনপিকে এবার নির্বাচনে যেতে হয়, তাহলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিলাম না কেন?

আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভাবনা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না, সে ব্যাপারে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। নিজেদের অধীনেই আগামী নির্বাচনের অনুষ্ঠানের কথা বলে আসছে সরকার। আর আমরা করছি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি রূপরেখা দেওয়ার কথা বলেছেন। জাতির সামনে সে রূপরেখা উত্থাপনের পর সরকারের প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ দেখেই নির্ধারণ হবে বিএনপির গন্তব্য। তবে বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত হলে তবেই অংশ নেবে বিএনপি।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচনের চেয়ে বিএনপির দাবি ও তৎপরতার মুখ্য বিষয় এখন নির্বাচনকালীন সরকার। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।

মোটকথা, বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অবস্থান থেকে সরেনি। রাজনৈতিক কৌশলগত কারণেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে নির্বাচন নিয়ে আগাম কোনো কথা নয়।

বিএনপিকে নিবন্ধন রক্ষার জন্য হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে হবে—সরকারি দলের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করছেন বিএনপি নেতারা। তারা মনে করেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী কোনো দল পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে তার নিবন্ধন বাতিল হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণ না হওয়ায় গত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এখন পর্যন্ত আগামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের সে দাবি পূরণের কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান নয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পরবর্তী পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আগামীতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক দলের একাংশ। সম্প্রতি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে একটি ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার সাজা হলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।’ রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে আগামী নির্বাচনে খালি মাঠ ছাড়বে না বিএনপি। তবে নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকি এড়াতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে বলে সরকারের পক্ষে যেসব বক্তব্য এসেছে তা আমলে নিচ্ছে না দলটি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!