• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

সাংগু নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব


বান্দরবান প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬, ০৭:৩৬ পিএম
সাংগু নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

বান্দরবান: বান্দরবানে রুমা উপজেলা সদরে সাংগু নদীর থানা পাড়ার ঘাটে পরিবেশ আইন অমান্য করে অবৈধভাবে একটি এস্কেভেটর (বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্র) ও দুটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এতে রুমা থানা পাড়া ও রুমা চর পাড়ার একাধিক সহজ-সরল পাহাড়ি  কুষকের ফসলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভারী যন্ত্র ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করায় আগামী বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে বিপদজনক ভাঙ্গনের আশঙ্কা করেছেন  স্থানীয়রা।

অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে

গত ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি এস্কেভেটর এবং দুটি ভারী ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে সাংগু নদী থেকে বালু উত্তোলনের ভয়াবহ  চিত্র। বালু উত্তোলনের কারনে  ইতোমধ্যে কয়েকটি বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে নদীর তীরে। আগামী বর্ষা মৌসুমে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে  স্থানীয় বাসিন্দা লুপ্রু মারমা বলেন, বালু উত্তোলনের কারনে বর্ষায় নদীর তীরে  ফসলি জমিগুলো বিপদজনকভাবে ভাঙ্গনের সম্মুখীন  হবে। ফসল হানি হবে।

বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত এস্কেভেটর চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাকে এক পাবলিক ঠিকাদার নিয়ে আসছে বালু উত্তোলন কাজে। এস্কেভেটর দিয়ে গত একমাস ধরে বালু উত্তোলন করছি। এদিকে  আবছার নামে এক শ্রমিক বলেছেন, দৈনিক ৭শ’ টাকা বেতনে দুটি ড্রেজার মেশিনে ঠিকাদার সালাউদ্দিনের বালু উত্তোলন করছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা  দীন মোহাম্মদ জানান, গত একমাস ধরে মেশিন দিয়ে বালু তুলছেন। দৈনিক ৭শ’ টাকায় বালু পরিবহণের কাজে নিয়োজিত  ট্রাকের দৈনিক হিসেব  করছেন  তিনি। রুমা চর পাড়ার

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মংশৈপ্রু মারমা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমার চাকরিও নেই, লেখাপড়াও জানি না। আমার দু’একরের  ফসলী জমিতে চাষ করে প্রতি বছর সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা উপার্জন করি। এই অর্থ দিয়ে সারা বছর চলত আমার সাত সদস্যের পরিবারে।  চট্টগ্রামের বালু ঠিকাদারের সহযোগি নুরুল কবির নামে এক ঠিকাদার এসে জোর করে আমার জমি থেকে বালু উত্তোলন  করছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার নুরুল কবির আমাকে আর্মির ভয় দেখিয়ে বলেন, বালুর বাবদ ৩০হাজার টাকা দেব তোমাকে। টাকা  না নিলেও তোমার জমি থেকে বালু উত্তোলন করবো, আর নিলেও করবো। এমন ভয় দেখিয়ে বালু উত্তোলন করছেন তিনি। অপর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক থুইনুমং মারমা জানান, তার নিজস্ব জমি নেই। ভাড়া নিয়ে জমি চাষ করতেন প্রতি বছর। বালু উত্তোলনের কারনে এবছর চাষ করতে পারেননি। সংসারে ভরণপোষণ  নিয়ে দুঃশ্চিন্তায়  আছেন তিনি।

চট্টগ্রামের বালু ঠিকাদার সালাউদ্দিনের সহযোগি  ঠিকাদার নুরুল কবির বালু উত্তোলন বিষয়ে সাংবাদিকদের  সামনে এসে কোন কিছু  না বলেই সটকে পড়েন।

তবে অভিযোগ স্বীকার করে চট্টগ্রামের বালু ঠিকাদার সালাউদ্দিন মুঠোফুনে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ডিপার্টমেন্টের। আমি শুধু শ্রমিক লাগিয়ে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কাজ করছি। বালু উত্তোলনের অনুমতি আছে কিনা আমার দেখার বিষয় না।

রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার  মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন এবং  বিধি মোতাবেক  পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের  চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক  মাসুদ করিম বলেন, বালু উত্তেলনের বিষয়টি দেখার মালিক জেলা প্রশাসন। তবে কাউকেও পরিবেশে ক্ষতি  করতে দেয়া হবেনা। অফিসার পাঠিয়ে সরেজমিন দেখে পরিবেশ  ভারসাম্য রক্ষার জন্য পরিবেশ আইনে মামলা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!