• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাংবাদিক আওলাদ ও জহির রায়হানের জন্মদিনে শাকিবের শ্রদ্ধা


বাবুল হৃদয় আগস্ট ১৯, ২০১৭, ০৮:০৪ পিএম
সাংবাদিক  আওলাদ ও জহির রায়হানের জন্মদিনে শাকিবের শ্রদ্ধা

ঢাকা: বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি সাংবাদিক মোহাম্মদ আওলাদ হোসেনের আজ (১৯ আগস্ট) ৫১তম জন্মদিন। একই দিনে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জহির রায়হানের ৮২তম জন্মদিন আজ। এই দুই খ্যাতিমান পুরুষের জন্মদিনে তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সুপারস্টার শাকিব খান।

আজ শনিবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় শাকিব খানের নিজস্ব ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক স্টাটাসের মাধ্যমে তিনি এই শুভেচ্ছা জানানো হয়। ফেসবুকে শাকিব খান লিখেন, ‘অনেক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আপনাদের জন্য।

বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়, পূজনীয় তিনি মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন। দীর্ঘদিন তিনি এদেশীয় চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে।

১৯ আগস্ট নন্দিত এই সাংবাদিকের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে এবার তিনি ৫১ বছরে পা দিতেন। সোনালীনিউজের পক্ষ থেকে দুই কিংবদন্তিকে জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন ১৯৬৬ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার ইসলামপুরের নিজ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৃত মোবারক হোসেন ও মা লুৎফুন্নেসার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ।

মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন

আওলাদ হোসেন ১৯৮৭ সালে ‘দৈনিক খবর’এর ম্যাগাজিন ‘সাপ্তাহিক ছায়াছন্দ’তে সহ-সম্পাদক পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দীর্ঘ ১৫ বছরের কর্মজীবন ছেড়ে ২০০৪ সাল থেকে আমৃত্যু ‘দৈনিক মানবজমিন’ পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন ১৯৯২ সালের ৯ জানুয়ারি মৌসুমী হোসেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির মো. শাহবাজ হোসেন মুন ও অপরাজিতা হোসেন মীম নামে দুই সন্তান রয়েছে। ছেলে ও মেয়ে দুজনেই বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে পড়ছেন।

আওলাদ হোসেন দেশের চলচ্চিত্রের অনেক ইতিহাস ও ঘটনার সাক্ষী। স্বভাবতই তিনি প্রজন্মের বিনোদন সাংবাদিকদের কাছে বটবৃক্ষের মতো, প্রতিষ্ঠানের মতো। মিষ্টভাষী ও মিশুক স্বভাবের এই সাংবাদিক সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে গেল বছরের ২ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

চোখের দেখায় আওলাদ হোসেন না থাকলেও তিনি বেঁচে আছেন তরুণ সাংবাদিকদের আদর্শ হয়ে। তিনি এভাবেই বেঁচে থাকবেন প্রজন্মের হাত ধরে আগামীর অনেক প্রজন্মে।

এদিকে ১৯৩৫ সালের এ দিনে ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন দেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী ও লেখক জহির রায়হান। আজ তার ৮২তম জন্মদিন। ১৯৭১ সাল ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের দ্বারা অপহৃত ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।

স্বাধীনতা যুদ্ধে শিশুসন্তানসহ স্বামী জহির রায়হানের সঙ্গে চলচ্চিত্রকার সুচন্দাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হলো। বাঙালি জাতি স্বতন্ত্র একটি পতাকা পেল। স্বাধীন দেশে বীরের বেশে জহির রায়হানও ফিরলেন। বিজয়ের রেশ না কাটতেই সুচন্দা হারান তার  প্রিয় স্বামীকে। সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে এই খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সুচন্দাকে।

১৯৬১ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনো আসেনি’। সেটি ব্যবসাসফল হয়ে উঠতে পারেনি, তবে সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়তে পেরেছিল। এরপর এক এক মুক্তিলাভ করে কাঁচের দেয়াল (পাঁচটি প্রেসিডেন্ট পুরস্কারপ্রাপ্ত), সোনার কাজল, সঙ্গম (পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গীন চলচ্চিত্র), বাহানা (পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র), বেহুলা, আনোয়ারা, জীবন থেকে নেয়া (প্রথম রাজনৈতিক চলচ্চিত্র) প্রভৃতি। পাশাপাশি প্রযোজনা করেন জুলেখা, দুইভাই, সংসার, সুয়োরাণী-দুয়োরাণী, কুচবরণ কন্যা, মনের মতো বউ, শেষপর্যন্ত প্রতিশোধ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে।

জহির রায়হান

প্রায় সমাপ্ত করেছিলেন বহুভাষিক আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী চলচ্চিত্র ‘লেট দেয়ার বি লাইট’। উদ্যোগ নিয়েছিলেন ভাষা আন্দোলন কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র একুশে ফেব্রুয়ারি নির্মাণের। চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে সাহিত্য জগতে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। সূর্য সংগ্রাম, তৃষ্ণা, বরফ গলা নদী, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, কতগুলো মৃত্যু প্রভৃতি তাঁর সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্ম। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি সচেতনভাবে চলে যান ভারতে। যুদ্ধে তুলে নেন তাঁর প্রিয় অস্ত্র ক্যামেরা।

দেশমাতৃকার সেবায় আত্মনিয়োগ করেন চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে প্রবাসী মুজিবনগর সরকার তথা আওয়ামী লীগের বিরাগভাজন হন। তাঁর কালজয়ী সৃষ্টিকর্ম স্টপ জেনোসাইড এর নির্মাণ ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়। অনেক সেক্টরে স্যুটিং এর জন্য প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও ইচ্ছায় প্রামাণ্যচিত্রটি সমাপ্ত হলেও সেন্সর বোর্ডে আটকে দেবার চেষ্টা করা হয়। এমনকি আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা এজন্য অনশন ধর্মঘট পর্যন্ত করেছিলেন। সব বাধাকে অতিক্রম করে জহির রায়হানের স্টপ জেনোসাইড মুক্তিলাভ করে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে স্টপ জেনোসাইড- ই সবচেয়ে শৈল্পিক ও মানবীয় আবেগ সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র হিসাবে স্বীকৃত।

এছাড়াও তিনি এসময়ে নির্মাণ করেন এ স্টেট ইজ বর্ন প্রামাণ্য চিত্রটি। মুজিবনগর সরকারের আদর্শ উদ্দেশ্যের সাথে বাংলাদেশের সংগ্রামের ধারাবাহিকতা সংযুক্ত করে নির্মিত চলচ্চিত্রটি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েছিল। এসময় তিনি প্রযোজনা করেন আরো দুটি প্রামাণ্যচিত্র- লিবারেসন ফাইটার্স ও ইনোসেন্ট মিলিয়ন্স।

সোনালীনিউজ/বিএইচজ

 

 

Wordbridge School
Link copied!