সাত খুন মামলার হাইকোর্টের রায় মঙ্গলবার

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করবেন।

মামলার শুনানি শেষে গত ২৬ জুলাই রায় ঘোষণার জন্য গত ১৩ আগষ্ট দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছিল। ওইদিন আদালত রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে আদেশ দেয়। আপিলে আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও  অ্যাডভোকেট মো. আহসান উল্লাহ।

অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জাহিদ সরোয়ার কাজল ও সহকারী এটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।

সাত খুন মামলায় চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি নিম্ন আদালত রায় দেন। রায়ে র‍্যাবের সাবেক ১৬ কর্মকর্তা ও সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার অপরাধজগতের ৯ সহযোগীসহ মোট ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া র‌্যাবের আরও নয়জন সাবেক কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। র‍্যাবের যেসব কর্মকর্তা ও সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে, তারা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থেকে প্রেষণে র‌্যাব এসেছিলেন। অপরাধ সংঘটনের সময় তাঁরা সবাই র‌্যাব-১১-তে কর্মরত ছিলেন। সাত খুনের মামলার পর তাঁদের সবাইকে নিজ নিজ বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ৩৫ আসামির মধ্যে ২৮ জন আপিল করেন। অপর সাতজন পলাতক রয়েছেন। নিম্ন আদালতের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। গত ২২ মে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। গত ২৬ জুলাই শুনানি শেষ হয়। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। দুই মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ গত ১৬ জানুয়ারি রায় দেন।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতা নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক দুই কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, এ বি মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব আলী, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আসাদুজ্জামান নুর, সৈনিক আবদুল আলিম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান, সেলিম, সানাউল্লাহ, শাহজাহান ও জামালউদ্দিন।

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন পলাতক। তারা হলেন সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, নূর হোসেনের সহকারী সানাউল্লাহ ও শাহজাহান।

১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, করপোরাল মোখলেছুর রহমান ও এএসআই কামাল হোসেন। শেষ দুজন পলাতক।

বিচারিক আদালতের রায় ও নথি গত ২২ জানুয়ারি হাইকোর্টে পৌঁছায়, তা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুই মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা। শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি ওই বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন, পরে শুনানি শুরু হয়। ঘটনার একদিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন