• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সানির কাবিননামা নিয়ে যা বললেন কাজী


ক্রীড়া প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৪, ২০১৭, ০১:৪০ পিএম
সানির কাবিননামা নিয়ে যা বললেন কাজী

ঢাকা: তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এক তরুণীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত সানির বিরুদ্ধে উত্থাপিত কাবিননামা সঠিক নয় বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার কাজী আনোয়ার হোসেন ওই কাবিননামা ভুয়া বলে দাবি করে জানান, শুধু কাবিননামাই নয়, কাবিননামায় স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে। এমনকি অফিসের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে তাও সঠিক নয়। কাবিনের কপি নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান গেলে এসব তথ্য উঠে আসে। 

এর আগে নাসরিন সুলতানা নামের স্ত্রীর দাবিদার ওই তরুণীর করা মামলায় গত রোববার (২২ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর আমিনবাজারে নিজ বাসা থেকে জাতীয় দলের স্পিনার আরাফাত সানিকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এর পর তাকে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। মামলার এজাহারে ঐ তরুণী উল্লেখ করেন সানির ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর উভয়ের সম্মতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

নাসরিনের দাখিল করা কাবিননামা অনুযায়ী, মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজী অফিসের ঠিকানা লেখা হয়েছে, ‌‌‘২০/সি মেরাদিয়া, খিলগাঁও, ঢাকা।’ কিন্তু বাস্তবে এই ঠিকানায় গিয়ে কোনো কাজী অফিসের সন্ধান মেলেনি। তবে উক্ত ঠিকানায় ভাই ভাই নামে একটি গোশতের দোকান পাওয়া গেছে।

কাজী আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য

গোশতের দোকানের মালিক আবদুল জলিল জানান, ৩ বছর ধরে তিনি এই ঠিকানায় গোশতের দোকান চালিয়ে আসছেন। তিনি এখানে কোনো কাজী অফিস দেখেননি। একই কথা ২০/সি মেরাদিয়ার বাড়ির মালিক আক্তার হোসেনেরও। তিনি জানান, তাদের এই বাড়িতে কোনো কাজী অফিস নেই, আর অতীতেও ছিল না। যদি কেউ এই ঠিকানা ব্যবহার করে কাবিননামা বানিয়ে থাকেন, তবে তা ভুয়া।

একই তথ্য জানান পাশের চা দোকানি মালেক। তিনি জানান, ৫ বছর ধরে এখানে তাঁর চায়ের দোকান। কিন্তু ওই বাসায় কোনো দিন কোনো কাজী অফিস ছিল না। তবে মালেক জানান, এই এলাকায় একটি কাজী অফিস আছে, এখান থেকে একটু দূরেই। ২০/১ নম্বর মেরাদিয়ায়। 

এছাড়া কাবিননামায় যে কাজীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তিনি মেরাদিয়া এলাকার কাজী নন। তিনি গোড়ান এলাকার কাজী। খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া ২০/বি এই ঠিকানায় কখনও কোনো কাজীর অফিস ছিল না বলে জানান মো. আনোয়ার হোসেন।

অথচ এই ঠিকানা উল্লেখ করে ৫৬ নম্বর ভলিউমে কাজী মো. আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত কাবিননামা (বিবাহ নিবন্ধন) প্রকাশ করা হয়েছে। আনোয়ার হোসেনের অফিসের ঠিকানা ৬৫ উত্তর গোড়ান। শাখা অফিস বি-৭৫, দক্ষিণ বনশ্রী।

কাজী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা প্রতি বছর এক নম্বর ভলিউম থেকে কাবিন (বিবাহ নিবন্ধন) শুরু করি। এক ভলিউমে ১০০ বিয়ের রেজিস্ট্রি করা হয়। এই এলাকার একজন প্রধান কাজীর অফিসে বছরে সর্বোচ্চ ৬০০ থেকে ৭০০ বিয়ে হয়। সে অনুযায়ী ৭ নম্বর ভলিউম হওয়ার কথা।

কাজী অফিসে ওই হিসেব অনুযায়ী দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ ভলিউম শেষ করে পর্যায়ক্রমে আরাফাত সানির কাবিনে (নিকাহ নামা) ৫৬ নম্বর ভলিউম রয়েছে। এখানে ৫৬ নম্বর মানে ৫৬শ। ২০১৪ সালে এত বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়নি। তার মানে এই কাবিননামা সম্পূর্ণ ভুয়া।

মেরাদিয়ার কাজী হাফেজ মাওলানা মো. ছলিম উল্যাহ খান জানান, আমার অফিসের ঠিকানা ছিল ২০/১ মেরাদিয়া। এই অফিসে আমরা একযুগের বেশি সময় ধরে আছি। কিন্তু ২০/বি এই ঠিকানায় আমাদের কোনো কাজী অফিস নেই। ২০১৪ সালেও ছিলো না। এমনকি জানামতে সেখানে অন্য কোনো কাজী অফিসও নেই। ‘আমার অফিসে ২০১৪ সালের ভলিউম নম্বর ছিল ১০০ থেকে ১০৬। ৫৬ কীভাবে এলো? এটা ভুয়া। আমার হাতে এমন কাজ হতে পারে না।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে বন্ধুর মাধ্যমে মোবাইল ফোনের নম্বর আদানপ্রদান। এরপর নাসরিন সুলতানার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ক্রিকেটার আরাফাত সানি। দীর্ঘ সময়ে অনেক ঘোরাঘুরির মধ্যে অন্তরঙ্গতাও বাড়ে দুজনের। প্রেমের টানে ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর পরিবারের অজ্ঞাতে বিয়েও করেন তারা। কিন্তু মেয়েকে ঘরে তুলে নেননি আরাফাত সানি। বলে-কয়েও ঘরে উঠতে পারেননি নাসরিন।

নাসরিন সুলতানা নামের ঐ তরুণী বলেন, প্রায় সাত বছর আগে আরাফাতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এর সূত্র ধরে দুজনের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠতা হয়, তার একপর্যায়ে পরস্পরকে ভালোবেসে ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তাঁরা বিয়ে করেন। কিন্তু বিষয়টি তাঁরা অভিভাবকদের জানাননি।

এ দিকে রিমান্ডে আরাফাত সানি এ অভিযোগের কথা অস্বীকার করেন। বিষয়টিকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে সানির পরিবার।

সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!