• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সামর্থ্যরে অতিরিক্ত বোঝা এনবিআরের কাঁধে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১১, ২০১৮, ১০:২৬ পিএম
সামর্থ্যরে অতিরিক্ত বোঝা এনবিআরের কাঁধে

ঢাকা : আগামী অর্থবছরের বাজেটের খরচ মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সংগ্রহ করতে হবে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় যা ৭১ হাজার ২০১ কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৩১.৬৪ শতাংশ। অথচ এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি গত কয়েক বছর ধরেই ১৬ থেকে ১৭ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ হিসাব ধরে অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। নির্বাচনী বছরের কারণে কর কাঠামোয় বড় ধরনের কোনো সংস্কার না করে বরং করপোরেট কর হার কমানো, আমদানি শুল্কে ছাড়, দ্বৈত কর ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। এতে রাজস্ব আদায় আগের তুলনায় কমে যেতে পারে।  

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ বিষয়ে বলেন, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জিত না হওয়ার ঝুঁকিই বেশি। চলতি অর্থবছরেও টার্গেট পূরণ না হওয়ায় পরে তা সংশোধন করা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ নির্ধারণ করাই উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।  

প্রায়ই একই মত প্রকাশ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ভঙ্গুরতার ফলে একদিকে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে শৃঙ্খলা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করায় সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হবে না।  

রাজস্ব আদায়কে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অনেক সময় করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হয়। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের সক্ষমতা এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছেনি। কর প্রশাসনকে প্রযুক্তির ব্যবহার ও অটোমেশনসহ সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে বেশি নজর দিতে হবে।  

অবশ্য বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর মধ্যে রয়েছে আয়কর মেলার মাধ্যমে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি, ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস স্থাপন, অটোমেশন পদ্ধতি আরো শক্তিশালী করে রাজস্ব ফাঁকি রোধ, করের হার না বাড়িয়ে করজালের বিস্তৃতি ইত্যাদি। অর্থমন্ত্রী এসব পদক্ষেপের ঘোষণা দিলেও সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন হবে এবং রাজস্ব আদায়ে এতে কতটা গতি আসবে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।  

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, সবশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি রাজস্ব আদায় করেছিল এনবিআর। ওই সময় ৭২ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার বিপরীতে ৭৬ হাজার ২২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সমর্থ হয়েছিল তারা। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিবছরই রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতির ঘটনা ঘটছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা, কিন্তু বছর শেষে আদায় হয় মাত্র ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা।

অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় কম হয়েছে ১৫.৫৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি, কিন্তু অর্জিত হবে না বিধায় তা কমিয়ে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (এপ্রিল ২০১৮) আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা।  

টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় অর্থবছরের শেষ দিকে এসে তা সংশোধন করতে হচ্ছে। কাটছাঁট করতে হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি। ফলে বছর শেষে বাজেটের একটি অংশ অবাস্তবায়িতই থেকে যাচ্ছে। আবার রাজস্ব আয় কম হওয়ার কারণে সরকারকে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা অর্থাৎ ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থ ধার করতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে তা মূল্যস্ফীতি ঘটাচ্ছে।  

অবশ্য জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ায় সবার নিচে। বাংলাদেশে এ হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আয় ১৪ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!