• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাম্প্রদায়িক হামলায় অস্বস্তিতে সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৩, ২০১৬, ১০:৩৩ পিএম
সাম্প্রদায়িক হামলায় অস্বস্তিতে সরকার

ঢাকা: হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মন্দির ভাঙচুর, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতালদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ এবং শিশু-নারীর ওপর সহিংসতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার। এসব অমানবিক সহিংসতার কারণে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনের সমালোচনার মুখেও পড়েছে তারা।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই এসব ঘটনা বাড়ছে। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা তাদের সাধ্যমতো ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন প্রতিহত না করা গেলে দেশান্তরের ঘটনা বাড়বে। এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা আরো তীব্র হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং প্রতীমা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যাওয়ার মধ্যেই গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি স্থানে মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে, গোবিন্দগঞ্জে দুর্বৃত্তদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে ভিটেমাটি থেকে। পাশাপাশি হঠাৎ করে বেড়ে গেছে শিশু ও নারীর ওপর সহিংসতা। সেই সঙ্গে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। সব কিছু মিলে দেশে এখন একটি অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকারের মন্ত্রীরা অভিযোগ করছেন, স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মদদ দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশকে আগাম জানিয়েও কোনো নিরাপত্তা পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন বিকেলেই নাসিরনগরে উত্তেজনা দেখা দেয় একটি কথিত ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে তারা ওই যুবককে আটক করে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর কোনো যুক্তিতেই হামলা হতে পারে না। এসব হামলার ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এরই মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বেশ কিছু হিন্দু পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য শহরে আসছেন।

পুলিশ আগাম নিরাপত্তা দেয়নি এই অভিযোগের ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিয়েছি।

সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়েছে তিন গুণ: চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলেন করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানায়, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসে প্রায় তিন গুণ সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ- এই তিন মাসে আট হাজার ২৫০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব অপরাধের মধ্যে হত্যা, অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর করা, গণধর্ষণ ও জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছেদের ঘটনাও রয়েছে। 

তারা জানান, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ২৬১টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তাতে এক হাজার ৫৬২টি প্রতিষ্ঠান, পরিবার ও ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে সংখ্যালঘুদের ওপর কমপক্ষে ৭৩২টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। যা আগের বছরের ঘটনার প্রায় তিন গুণ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৫৬৬টি, যা আগের এক বছরের তুলনায় ছয় গুণেরও বেশি। এ সময়ে ১০ জন নিহত, ৩৬৬ জন আহত ও ১০ জন হিন্দু অপহৃত হন। জোরপূর্বক ধর্মান্তরের অভিযোগ রয়েছে দুটি। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন আটজন। জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, দখল ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৬৫৫টি। এ ছাড়া ওই সময়ে কমপক্ষে ২২টি হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হয়। 

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বরিশাল, বাগেরহাট, পাবনা ও নড়াইলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এরপর সংখ্যালঘু নির্যাতন ব্যাপক হারে কমে আসে। এরপর ২০১২ সালের অক্টোবরে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের হামলা হয়। আর সর্বশেষ গত ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। সেদিন অন্তত ১০টি মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। হিন্দু পল্লীতে নারী-পুরুষকে বেধড়ক পেটানো হয়।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!