• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সারা বন ‘হেঁটে বেড়ায়’ যে গাছ


ফিচার ডেস্ক নভেম্বর ১৮, ২০১৬, ০৪:১৮ পিএম
সারা বন ‘হেঁটে বেড়ায়’ যে গাছ

ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বের বন সুমাকো বায়োস্ফেয়ার রিজার্ভ। ইউনেস্কো ঘোষিত সংরক্ষিত এ বনটিকে বলা হয় ‘হার্ট অব দ্য ইউনেস্কো’। এই খানেই এক অদ্ভূত গাছের সন্ধান পেয়েছেন স্লোভাক ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস ব্রাতিস্লাভার জীবাশ্মবিদ পিটার ভ্রসাঙ্কসি।

এক দিনে প্রায় ৩ ঘণ্টা গাড়িতে আর ১৫ ঘণ্টা নৌকায় চড়ে, পায়ে হেঁটে ও খচ্চরের গাড়িতে করে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করে এগুলোর দেখা পান তিনি। এগুলো মূলত এক ধরনের পাম গাছ। বনের এই গাছগুলো জে আর আর টলকিনের মহাকাব্য ‘লর্ড অব দ্য রিংস স্যাগা’য় বর্ণিত গাছের মতো- সারা বন হেঁটে বেড়ায়! শুধু তাই নয়, বছরে ২০ মিটারের মতো হাঁটতে পারে গাছগুলো।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন ভ্রসাঙ্কসি। শুরুতেই তিনি পান অনাবিষ্কৃত ৩০ মিটারের একটি জলপ্রপাত, নতুন একটি টিকটিকি ও ব্যাঙের প্রজাতি। পরে তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। বনের পামগাছগুলোর শিঁকড় প্রতিদিন দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার বাড়ে। গাছগুলোর শিঁকড় থেকে জন্ম নেয় নতুন গাছ। এভাবেই গাছে ছেয়ে যায় পুরো বন। এ কারণেই এই গাছগুলোকে বলা হয় হেঁটে চলা গাছ।

ভ্রসাঙ্কসি জানান, মাটি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কারণে গাছগুলোর শিঁকড় থেকে জন্ম নেয় নতুন নতুন শিঁকড়। নতুন শিঁকড়গুলো মাটির বছরে প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এবং সেগুলো থেকে জন্ম নেয় নতুন গাছ। তিনি বলেন, ‘ঠিকমতো সূর্যের আলো এবং উর্বর মাটি থাকলে একটি গাছ জন্ম নিতে সময় লাগে প্রায় দুই বছর।’

ভ্রসঙ্কসি আরো জানান, দুই মাসের বিপজ্জনক এ অভিযানে তিনি প্রায় ১৫০ প্রজাতির নতুন জীবের সন্ধান পেয়েছেন। তবে এজন্য তাকে ১০ কেজি ওজন হারাতে হয়েছে!

দুঃসংবাদ হচ্ছে, সুমাকো বায়োস্ফেয়ার রিজার্ভের এই গাছগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। কৃষি সংস্কার কর্মসূচির আওতায় বিক্রি করে ফেলা হচ্ছে এই গাছ। একখণ্ড ভূমি পাওয়ার জন্য স্থানীয়রাও কেটে ফেলছে এগুলো। ভ্রসাঙ্কসি বলেন, ‘এখন যা ঘটছে, তা হলো- স্থানীয়রা এখানে আসে, কতগুলো গাছ কেটে ফেলে এবং নিজেদের জন্য একখণ্ড ভূমি নিশ্চিত করে। নতুন আইন অনুসারে, পাঁচ বছর পর থেকে তারা এই ভূখণ্ড বিক্রির ক্ষমতা পাবে এবং তারা তাই করবে।’

এর আগ পর্যন্ত অল্প কিছু স্থানীয় বনের ভেতর বিভিন্ন কৌশলে বাস করত। সেখানকার এক ওঝার দাবি, সংরক্ষিত ওই বনটির ভেতরের কিছু অংশে ‘প্রেতাত্মা’ ঘুরে বেড়ায়। এছাড়া বনটি অনেক জীবাণুবাহী কীটপতঙ্গে পূর্ণ বলেও দাবি তার। তবে বনটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য লড়ে যাচ্ছেন অনেক পরিবেশবাদী। বনের প্রতি হেক্টর জমি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ ডলার মূল্যে। স্থানীয় পরিবেশবাদী থিয়েরি গার্সিয়া এ পর্যন্ত নিজের অর্থে কিনেছেন ৩০০ হেক্টর জমি। এসব জমিতে তিনি গাছসহ অন্যান্য জীব সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ আরএস

Wordbridge School
Link copied!