• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সালমান রুশদি: একটি অভিশপ্ত ব্যতিক্রমী জীবন...


অজয় চৌধুরী ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭, ০১:৫৯ পিএম
সালমান রুশদি: একটি অভিশপ্ত ব্যতিক্রমী জীবন...

সালমান রুশদি। বিশ্ব সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় ও তুখোড় লেখক হিসেবে পরিচিতি যার। ব্রিটিশ ভারতীয় এই ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’(১৯৮১) দিয়েই পেয়েছিলেন বুকার প্রাইজ। লেখার বিষয়বস্তু বেশীর ভাগ সময় ভারতীয় উপমহাদেশীয়। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তার চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পৃথিবীব্যাপী তোলপাড় ফেলে দেয়। শুধু তাই না, বেশ কয়েকটি দেশের মুসলিমরা একে বিতর্কিত করে তুলে এবং প্রতিবাদ জানায়। যা অনেক সময় সহিংস রূপ ধারণ করে। তাকে মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়। ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি এই বই রচনার জন্য ১৯৮৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করে। এরপর তিনি দেশান্তরি হন। বাস করতে থাকেন নিউইয়র্কে। তার যাপিত জীবন নিয়ে ২৭ মার্চ ২০১৩ সালে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে ‘দ্য টকস’। সেখান থেকে বিশ্বখ্যাত লেখকের সাক্ষাৎকারটি ভাষান্তর করেছেন অজয় চৌধুরী

মিস্টার রুশদি, পৃথিবী নিয়ে আপনার আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আছে কি ? 
না (হাসি)। এই পৃথিবীতে!  আমি মনে করি, বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে একজন লেখক হওয়া খুব দুরহ ব্যাপার বলে আমি আশাবাদী। যাই হোক, অন্ধকারাচ্ছন্নতা তৈরি করে অধিক হাস্যরস।

আপনি কিসের তাড়নায় লিখেন?  
আমি কিছুই করতে পারি নি!  আমি সবসময় চাইতাম লিখতে। আমার জীবনে শুধু অন্য একটি শখ ছিলো যে আমি অভিনেতা হবো।  যা আমি হতে পারি নি। আমি সবসময় ভাবতাম যদি ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ এর মতো ছবি হতো তবে আমি একটি অংশে অভিনয় করতাম, একজন ভাগ্যগণক হিসেবে।  আমি ভাবতাম,  অদ্যাবধি আমি উপন্যাসের রূপরেখা তৈরি করেছিলাম, যদি ছবিটি কোনদিন তৈরি হতো আমার উচিত ছিলো ভাগ্যগণক হিসেবে অভিনয় করার।  

ভালো তো,  ছবিটি তৈরি হয়েছে, আপনি কি ছিলেন?  
পরিচালক আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলো,  কিন্তু আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। কারণ শেষ দৃশ্যে যা ঘটেতো, সেটি দেখে দর্শকরা ভাবতো ‘ওটা সালমান রুশদী ছিলো’(হাসি)। এটা ছিলো শুধু তোমার মনোযোগ পাওয়ার জন্য যেভাবে এটা হওয়া উচিত ছিলো।  যাইহোক, আমার শেষ দৃশ্যটি কেটে দেওয়া হয় ।

খুব খারাপ...  
কিন্তু আমার ভারী আক্ষেপ ছিলো আমি অভিনয় করতে সক্ষম ছিলাম না, যখন আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো উইল ফেরোল কোম্পানির তৈরি ‘আনটাইটেল উইল ফেরোল নাসকার’ মুভিতে। যা পরে থালাডিগা নাইটস্ নামে হয়।  

থালাডিগা নাইটস্ মুভিতে সালমান রুশদীর কি ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিলো ?  
ধারণাটা তাদের ছিলো, শুধু একটা অংশে যেখানে তিনজন অত্যন্ত ভাগ্যহীন মানুষ যাদের দেখা গিয়েছিলো নাসকারের ড্রাইভারের চরিত্রে। আমরা ভেবেছিলাম তারা ছিলেন - জুলিয়ান স্নাবল,  লো রিড এবং আমি(হাসি)। এবং আমরা সবাই ভেবেছিলাম আমাদের ইউনিফর্ম পরতে হবে আর হাটতে হবে উতপ্ত গরমে। বিষয়টি ছিলো চমৎকার কিন্তু আমরা কেউই এটা করতে পারতাম না। আমি ছিলাম মধ্যম সারির  বইয়ের দোকানের ভ্রমনকারী,  লো ছিলো কনসার্ট ভ্রমনকারী,  জুলিয়ান অন্য কিছু একটা করতো,  কিন্তু শেষে তারা ধারনাটা বাদ দেয়  এবং যা আর ঘটে নি।  আমার কাজটির প্রতি ভালবাসা ছিলো।  

সম্প্রতি আপনার লুকায়িত জীবনের দশ বছর ও ‘স্যাটানিক ভার্সেস’  প্রকাশের পর আয়াতুল্লাহ খামেনীর দেওয়া ফতোয়া মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে একটি আত্মজীবনী বের হয়। অবশেষে চেপে রাখা কথাগুলো প্রকাশ হওয়ায় কি আপনার ভালো অনুভব হচ্ছে? 
হ্যা আমি দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলাম কথাগুলো বলতে কারণ আমি একটি প্রান্তে পৌছাতে চেয়েছিলাম  যেখানে আমি ঘটনাগুলো থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলাম যেনো আমি বস্তুনিষ্ঠ ভাবে লিখতে পারি।  আমি চাই নি আবেগী হয়ে বোকার মতো গুপ্ত সবকিছু বলে ফেলতে।  আমি কখনো চাইনি এটা অপরাহ্'র এপিসোডের মতো কিছু একটা হোক। তাই আমি ২৩ বছর অপেক্ষা করেছি যতক্ষণ না এটা শুরু হয়।  আমি শুধু ফতোয়ার বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে চাইনি,  আমার পূর্বের জীবনকে নিয়েও লিখতে চেয়েছি।  সত্যি বলতে, আমি কখনো ভাবিনি যে আমি একটি আত্মজীবনী লিখবো।  

কেন নয় ?
নিদিষ্ট সময়ের পূর্বে মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করতো,  আমি বলতাম-‘আমি আগ্রহী নই।’ কেনো আমার আত্মজীবনী লেখা উচিত? আমি আমার নিজেকে নিয়ে লিখতে আগ্রহী নই।  তার কারন ছিলো আমি এমন একজন লেখক হতে চেয়েছিলাম যিনি অন্যদের নিয়ে লিখবে।

আপনি কি বিশেষ কোন স্মৃতিকাতর ব্যক্তি?  
না।  আমি শুধুমাত্র দূর্ভাগ্যজনকভাবে অভিশপ্ত ব্যতিক্রম জীবন যাপন করছি।

হুমকির সম্খুখীন না হলে কি আজ আপনি অন্য রকম লেখক হতেন ?  
না।  আপনি যদি আমার জীবন সম্পর্কে না জানতেন- যদি কখনো আমার জীবনের নির্দিষ্ট বিষয়ও পড়তেন  যার সবকিছু ছিলো বইতে,  আর আপনি যদি মাত্র বইটা পড়েন  দেখবেন সেখানে এখনো কিছু ব্যতিক্রম নেই যা ১৯৮৯ সালে ঘটেছিলো।  আপনি দেখবেন লেখকের জীবনের বিশাল বিচ্ছেদ রয়েছে যাতে বইটা পুরোপুরি বদলে যায় এমনটি আমি মনে করি না। আমি মনে করি এ বইটিতে রয়েছে নিজস্ব অবিচ্ছিন্নতা এবং এটি তৈরি করেছে নিজস্ব যাত্রাপথ।

এখনো কি বার বার নিজ বাহুতে তাকান?  
না,  সেরকম নয় ঠিক। আসলে দশ বছর হয়ে গেলো এবং অর্ধ বছর আগেও যখন সবকিছুতেই খুব বুঝে শুনে করতে হতো। গত দশ বছরে নিউইয়র্ক ও লন্ডনে আমি নিখুঁত সাবলিল ভাবে জীবন কাটাচ্ছি।  

আমি শুনেছিলাম যে ‘মিডনাইটস্ চিলড্রেন’ তৈরির সময় বিষয়টি সংগোপনে আবর্তিত ছিলো এবং ভিন্ন নাম ছিলো।  এটা কি মুসলিম প্রগতিবাদীদের ভয়ে করা হয়েছিলো?  
না। আসলে ভারতে ছবি তৈরি করতে গেলে যা হয়,  শুধু ভারতে না কিন্তু মধ্যএশিয়াতেও- যখন কেউ বই বা প্রকল্প আসে মিডিয়া খুব আগ্রহী থাকে, আর তারা আকস্মিক (উগ্রপন্থীরা)  হামলা করে।  এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।  এটাই ছিলো নকল টাইটেল দেওয়ার কারন,  আমরা চাইছিলাম যে সবাই এতে মনোযোগ দিক। এটা খুব কষ্টসাধ্য যে পুরো মানুষগুলোর উত্তেজিত চাঞ্চল্য মুক্ত ছবিটা তৈরি করা।  

আপনি কি ভারতে পরিপূর্ণ ভাবে বিখ্যাত ?  
শুধু একটুখানি।  এটা ম্যাডোনার মতো নয় কিংবা ইউ-২ এর মতো নয়।  ইহা বিখ্যাতের মতো কিছু নয়।  আমি সাবলিল ভাবে হাঁটতে পারি।  সব সত্বেও,  সব লেখকেরই জীবনে থাকে খুব ব্যক্তিগত অবস্থান, নীরবেই সে কাজ করতে চায়। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!