• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সালিশে অপদস্ত তরুণীর আত্মহত্যা, গ্রেপ্তার চেয়ারম্যান


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১১, ২০১৬, ০৬:২১ পিএম
সালিশে অপদস্ত তরুণীর আত্মহত্যা, গ্রেপ্তার চেয়ারম্যান

সাতক্ষীরা: সালিশে ইউপি চেয়ারম্যানের সামনেই তরুণীকে আপদস্ত করা হয়। অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে ওই তরুণী। এ ঘটনায় পুলিশ কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম মনিরুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার (১০ ডেসেম্বর) গভীররাতে সাতক্ষীরা শহর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার করা চেয়ারম্যান এসএম মনিরুল ইসলাম সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ জানান, গত ৯ ডিসেম্বর উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের একজোড়া তরুণ-তরুণীকে আটক করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে সোর্পদ করে স্থানীয়রা। পরে চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বিচারের নামে গ্রামপুলিশ দিয়ে ওই তরুণ-তরুণীকে বেঁধে সোনাবাড়িয়া বাজারে ঘোরায়। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে মেয়েটি।

এ ঘটনায় শনিবার (১০ ডিসেম্বর) মেয়েটির ভাই ইব্রাহিম হোসেন বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামিকে করে কলারোয়া থানায় একটি এজাহার দেন। এরপর মধ্য রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন বলেন, ‘গত ৯ ডিসেম্বর স্থানীয়রা ওই  তরুণ-তরুণীরা আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মনিরুল স্থানীয় জনরোষ থেকে ওই  তরুণ-তরুণীকে উদ্ধার করে এবং তাদের মুক্ত করে দিতে বলে। মনিরুল এটাও জানায়, কেউ যদি এ সামান্য বিষয়কে বড় করার চেষ্টা করে, তবে বিষয়টি আদালতে পাঠানো হবে। এ সময় আটক হওয়া তরুণীর ছবি তোলে স্থানীয় জয়দেব নামের এক যুবক। ছবিটি দেখার পরে ওই তরুণী আত্মহত্যা করে।

তিনি আরো জানান, পুলিশ মনিরুলকে গ্রেপ্তারের মূল কারণ হচ্ছে- সম্প্রতি উপজেলাব্যাপি পুলিশের লাগামহীন গ্রেপ্তার বাণিজ্যের প্রতিবাদে একটি জনসভা করে চেয়ারম্যান মনিরুল। ওই সভায় আরও ১২ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমিও বক্তব্য রাখি। এরপর থেকে কলারোয়া থানার ওসি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুলসহ ওই সভায় উপস্থিত প্রায় সব চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হুমকি দিতে থাকে। এ আটক ওই ওসির আক্রোশ ছাড়া কিছু না। আর মামলাটিও ওসি’র প্ররোচনায় চেয়ারম্যানের নাম জড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তরুণীর ভগ্নিপতি আরিফুল ইসলাম বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর তার শ্যালিকা বাজারে ফ্লেক্সিলোড করতে গেলে স্থানীয় অতিউৎসাহী লোকজন তার শ্যালিকা ও সঙ্গে থাকা তরুণকে আটক করে। পরে চৌকিদারদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মনিরুলে সামনে নিয়ে যায়। তখন তিনি সব শুনে বকাঝকা ও মারধর করে ছেড়ে দেন। এ অপমান সইতে না পেরে তার শ্যালিকা আফরোজা খাতুন আত্মহত্যা করে।

চেয়ারম্যান মনিরুল আত্মহত্যার কথা পুলিশের সামনে সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেছেন। এবং বলেছেন অতি উৎসাহী মানুষের রোষ থেকে উদ্ধার করতে তিনি তাদের বকাঝকা করে ছেড়ে দেন। এক যুবকের গোপনে তোলা ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় মেয়েটি আত্মহত্যা করে। সম্প্রতি পুলিশের যত্রতত্র সাধারণ মানুষ আটক করে বাণিজ্য করার ঘটনায় আমার ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত জনসভা করার ঘটনায় প্রতিহিংসা স্বরুপ ওসির নির্দেশে আমাকে আটক করা হয়েছে। সেদিনকার জনসভায় উপজেলা সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে।

তরুণীর ভগ্নিপতি আরিফুল ও ভাই ইব্রাহিম জানান, বছর খানেক আগে আফরোজাকে কুষ্টিয়াতে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু উভয় পক্ষে বনিবনা না হওয়ার কারণে আফরোজাকে ছাড়িয়ে আনেন তারা।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট তামিম আহমেদ সোহাগ বলেন, অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল মো. মহিবুল্যাহর কাছে রোববার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে আফরোজার ভাই ইব্রাহিম আদালতে মামলাটি জোরপূর্বক তাকে দিয়ে করানো হয়েছে মর্মে এফিডেভিট জমা দিলে আদালত আগামী ১৫ ডিসেম্বর শুনানীর দিন ধার্য্য করে চেয়ারম্যান মনিরুলকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!