• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাহিত্যচর্চা-ই নয়, সামাজিক দায়িত্বও পালন করছেন শিশুসাহিত্যিকরা’


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭, ০৬:২৬ পিএম
‘সাহিত্যচর্চা-ই নয়, সামাজিক দায়িত্বও পালন করছেন শিশুসাহিত্যিকরা’

প্রধান অতিথি ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করছেন শিশুসাহিত্যিক আহসান মালেক।

ঢাকা: দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, নদীতে ঢেউ থাকে, বালু থাকে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছে ঢেউ নয়, বালু পছন্দ। এই বালুপ্রীতির কারণে ঢেউয়ের চাইতে বালুকে মূল্যবান করে তুলছে তারা। ফলে সমাজে সৃষ্টিশীলতার পরিবর্তে দুদর্শা নেমে আসছে। এর নেপথ্যে কাজ করছে পুঁজিবাদ ব্যবস্থা।

এই বরেণ্য প্রাবন্ধিক বলেন, পুঁজিবাদ এখন ভাষার শত্রু, সৃজনশীলতার শত্রু, শিশুর শত্রু। এ ব্যবস্থার হিংস্র থাবায় প্রকৃতি, মানুষসহ সারা বিশ্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। শিশুসাহিত্য চর্চা বিদ্যমান ব্যবস্থা তথা পুঁজিবাদ ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই কাজ করছে। চট্টগ্রাম একাডেমির এ পুরস্কারও ওই পুঁজিবাদ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ। আমি মনে করি শিশুর পাশে দাঁড়ানোর মানে পুঁজিবাদ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।

তিনি আরো বলেন, শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। এ ভবিষ্যৎ মানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে। উন্নয়নের নামে, সভ্যতার নামে শিশুদের অবজ্ঞা করা হচ্ছে। নিষ্ঠুর হাতে তাদের উদ্বাস্তু করা হচ্ছে। সমাজ যতই উন্নত হচ্ছে, আমরা যতই সভ্যতার বড়াই করছি শিশুরা ততই অবহেলিত হচ্ছে। শিশুদের জন্যে যারা কাজ করছেন তারা শিশুদের প্রতিই দায়িত্ব পালন করছেন। শিশুসাহিত্যিকরা কম মর্যাদা পান বলে শিশুরাও অবহেলিত। তারপরও শিশুসাহিত্যিকরা কেবল সাহিত্য চর্চা নয়, সামাজিক দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন।

সিরাজুল ইসলাম ইসলাম চৌধুরী বলেন, একসময় কচিকাঁচা, খেলাঘর, মুকুলের মাহফিল ইত্যাদি সংগঠন যেভাবে শিশুদের বিকাশের ক্ষেত্রে যত্মশীল ছিল এখন তা নেই। ধ্রুপদী সাহিত্য, কালজয়ী সাহিত্য আর কার্টুন এক সঙ্গে যায় না। সাইন্স ফিকশান আর বিজ্ঞান এক জিনিস নয়। কমিকস আর কার্টুনধর্মী লেখা শিশুদের কল্পনার জগতকে ক্রমশ সংকুচিত করছে। তাদের কল্পনা ও ভাবনার জগৎটাও বিকশিত হচ্ছে না। এ জায়গায় শিশুসাহিত্যিকদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। কাজ করতে হবে। কল্পনার মাধ্যমে শিশুদের বিকাশে সৃষ্টিশীল চরিত্র নির্মাণ করতে হবে।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তোপখানা রোডে চট্টগ্রাম সমিতি ভবনে চট্টগ্রাম একাডেমি প্রবর্তিত অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, খ্যাতিমান ছড়াশিল্পী লুৎফর রহমান রিটন, শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া, চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক, সাপ্তাহিক স্লোগান সম্পাদক মোহাম্মদ জহির।

একাডেমির মহাপরিচালক নেছার আহমদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন, একাডেমির পরিচালক শিশুসাহিত্যিক অরুণ শীল, ছড়াশিল্পী রমজান মাহমুদ, কবি আবুল কালাম বেলাল ও একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, কবি-শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ। অনুভূতি ব্যক্ত করেন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক আহসান মালেক ও বিএম বরকতউল্লাহ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, পুরস্কার উপ-কমিটির আহ্বায়ক জিন্নাহ চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন, আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমু। এবার পদ্যে ‘মেঘের সাথে এ মন মাতে’ গ্রন্থের জন্যে ছড়াশিল্পী আহসান মালেক ও ‘জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্প’ গ্রন্থের জন্যে গল্পকার বিএম বরকতউল্লাহ পুরস্কার লাভ করেন। তাদের হাতে প্রধান অতিথি ক্রেস্ট, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!