• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা ঘাটতিতে ৯ ব্যাংকের মূলধন


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৫, ২০১৮, ১২:৩৪ পিএম
সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা ঘাটতিতে ৯ ব্যাংকের মূলধন

ঢাকা: অনিয়ম আর দুর্নী‌তিতে জড়িয়ে পড়ায় খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে গিয়ে মূলধনই খেয়ে ফেলেছে কয়েকটি ব্যাংক। খেলাপি ঋণের ভারে দিন দিন তীব্র আর্থিক সংকটের মুখে পড়ছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে সরকারি-বেসরকারি ৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে আর্থিক খাতে দিন দিন বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। এতে বাড়ছে খেলাপির পরিমাণ। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে ব্যাংকগুলো। এখনই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের বিপদে পড়তে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাজেট থেকে জনগণের করের টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে মূলধন যোগান দেয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। 

নিয়মানুযায়ী, ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যেটা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে।

ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম মূলধনের পাশাপাশি শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু গত ডিসেম্বর শেষে ন্যূনতম এই মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি-বেসরকারি ৯টি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এই ৯ টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। এদের মধ্যে অধিকাংশই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬টি ব্যাংকের; ১৭ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে; ৭ হাজার ৭৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সোনালী ব্যাংকের; ৫ হাজার ৩৯৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এছাড়া বেসিক ব্যাংক ২ হাজার ৬৫৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ৮১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংক ৬৩৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ১৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে।

বেসরকারি খাতের ৩ টি ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের; ১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এছাড়া ফারমার্স ব্যাংক ২৮২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ২৪৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে।

এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ৭ ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালনার ব্যর্থতার কারণে এই পরিমাণ খেলাপি দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেয়ার সময় কেউ গভীরভাবে চিন্তা করে দেয়নি। যেমন বেসিক, সোনালী ও জনতা ব্যাংকসহ রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকগুলো থেকে এলোমেলো ঋণ দেয়া হয়েছিল।

‘দোষীদের সনাক্ত করে শাস্তি না দেয়ায় ধীরে ধীরে ব্যাংকিং খাতে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। যে কারণে বাড়ছে খেলাপির পরিমাণ। এই জন্য ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’

তবে বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে এই ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে পড়তে হতো না বলে মনে করেন এই ইব্রাহীম খালেদ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিুল ইসলাম লেন, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলোকে মরে যেতেও দেয়া যাবে না। কারণ এসব ব্যাংকে লাখ লাখ গ্রাহকের আমানত রয়েছে।

সাধারণত সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি তৈরি হলে বাজেট থেকে তার যোগান দেয় সরকার। অর্থাৎ জনগণের করের টাকায় দিয়েই ঘাটতি মেটানো হয়। তবে করের টাকায় মূলধন যোগানো উচিত নয় বলে মন্তব্য করলেন এই দুই অর্থনীতিবিদ।

তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি সেসব ব্যাংকের মালিকদেরকেই পূরণ করতে হবে। যদি তাতে তারা ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেট থেকে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণ করতে অর্থ সহায়তা দেয়া কাঙ্খিত নয়। এটা জনস্বার্থ বিরোধী কাজ। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সরকারি ব্যাংক থেকে মূলধন সহায়তা দেয়া হবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাপার। কেননা যেখানে সরকারি ব্যাংকগুলো নিজেরাই ঘাটতিতে রয়েছে, সেখানে তারা কিভাবে বেসরকারি ব্যাংককে মূলধন যোগান দিবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের আবশ্যিকতা ছিল ৯০ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করেছে ৯৪ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। অনেক ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মূলধন সংরক্ষণ করেছে। ফলে ৯টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে থাকলেও সামগ্রিকভাবে চার হাজার ৪০৬ কোটি টাকা মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে। তবে এক বছ‌রের ব্যবধা‌নে ১২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!