• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সিংগাইরে তিন ভাইয়ের ইয়াবা সাম্রাজ্য!


একেএম সীমান্ত, সিংগাইর থেকে ফিরে জুলাই ১৭, ২০১৬, ০৬:০৮ পিএম
সিংগাইরে তিন ভাইয়ের ইয়াবা সাম্রাজ্য!

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় ‘প্রভাবশালী’ তিন ভাইয়ের ইয়াবা ব্যবসা এখন আরও চাঙা। মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকায় একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছেন ইয়াবা সম্রাট স্বপন দেওয়ান। কিন্তু জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও সেই ব্যবসা আরও রমরমা করে গড়ে তুলছেন প্রতিনিয়ত। তার অন্যতম সহযোগী দুই ভাই এন্টু  দেওয়ান ও রিপন দেওয়ান। 

ইয়াবা সম্রাট স্বপনের অত্যাচার ও প্রভাবে মুখ খুলতে ভয় পান সিংগাইরের লোকজন। মাদক ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার চাপ দেয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে কিছুতেই থামছে না দেওয়ান গংদের ইয়াবা ব্যবসা। 

মাদক ব্যবসার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সিংগাইরের চারিগ্রাম ইউনিয়নের এলাকাবাসী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবরে লিখিত ও অনলাইনে অভিযোগসহ স্মারকলিপিও দিয়েছেন। তবুও দেওয়ানদের মাদক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। এ প্রতিবেদকের কাছে এলাকাবাসীর বিস্ময়ে প্রশ্ন রাখেন, দেশের সরকার ও প্রশাসনের চেয়েও কি দেওয়ানরা বেশি ক্ষমতাধর? 

অনুসন্ধানে জানা যায়, এক সময়ে বিএনপি-জামায়াতের  রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন স্বপন দেওয়ান ও এন্টু দেওয়ান । ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় আত্মগোপনে চলে যান তারা। এরপর ২০০৯-এ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে, ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগ দেয় দেওয়ান গংরা। সন্ত্রাসী হিসেবে চারিগ্রামে এই দেওয়ান গং বিএনপি সরকারের সময় থেকেই সুপরিচিত ছিল। 

আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই ইয়াবা ও অস্ত্রের ব্যবসায় নামে দেওয়ানরা। আরেক ভাই রিপন দেওয়ান এ বছর ইউপি নির্বাচনে ঘোড়া মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন। অভিযোগ আছে, এই রিপন দেওয়ান নির্বাচনের আহগ সরকার দলের সাথে হাত মেলায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী জানান, সিংগাইর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বলধারা ইউপি চেয়ারম্যান মাজেদের প্রত্যক্ষ মদদেই এই তিন দেওয়ান দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা। 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, রিপন দেওয়ানের জীবিকা নির্বাহ শুরু হয় মোটরসাইকেল চুরির মাধ্যমে। চুরির শত কৌশল জানা আছে তার। চোরাই মোটরসাইকেল ব্যবসা করে অল্প দিনেই অঢেল সম্পদ গড়ে তোলেন রিপন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সিংগাইর থানাসহ সাভার, ঢাকার হাজারীবাগ ও চকবাজারসহ বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক মামলা রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিপন দেওয়ানের চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির টাকা লগ্নি হয় স্বপন ও এন্টু দেওয়ানের ইয়াবার ব্যবসায়। আর এই ইয়াবা ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে পাশাপাশি চলছে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, চারিগ্রাম ইউনিয়নে ইয়াবা এখন হাত বাড়ালেই পাচ্ছে উঠতি যুবকেরা। তাই এলাকার যুবকরা পড়ালেখা ও খেলাধুলা ছেড়ে প্রতিনিয়ত এই মাদকের পেছনে ছুটছে। ইয়াবা আসক্ত এই বিপথগামী যুবকরা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রীদের ইভটিজিং করছে। একাধিকবার পুলিশে অভিযোগ করেও কোনও প্রতিকার মেলেনি গ্রামবাসীর। দিন দিন এর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে।  

একপর্যায়ে এলাকাবাসীর পক্ষে রুবেল হোসেন নাম গ্রামবাসী গত ২২ মে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর অনলাইনে অভিযোগ দেন। পরে ২৬ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানিকগঞ্জের এসপি মাহফুজুর রহমানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এসপি মন্ত্রীর সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে ডিবির ওসি রবিউল ইসলামের কাছে পাঠান (স্মারক নং- ১৫৬৮/ভি)।

এ বিষয়ে জানতে ডিবির ওসি রবিউল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একজন এসআইকে দায়িত্ব দেয়া আছে। তিনিই তদন্ত করছেন। তবে তিনি অবশ্যই পরে দেখবেন বলেও জানান। 

একই বিষয়ে সিংগাইর থানার ওসি সৈয়দউজ্জামান জানান, এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা আমাদের নজরদারিতে আছে। তারা সবসময় পালিয়ে বেড়ায়। খুঁজে পেলেই গ্রেফতার করা হবে। 

এই বিষয়ে জানতে ইউএনও শেখ জাহিদুল ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!