• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা


মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ, সিরাজগঞ্জ জানুয়ারি ২৭, ২০১৭, ১০:৫০ এএম
সিরাজগঞ্জে বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা

প্রচণ্ড শীত ও হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জের কৃষকরা বোরো ধান আবাদ ও রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন চলছে বোরো আবাদের ধুম। ভোরের আলো ফোটার আগেই কোমর বেঁধে ফসলের মাঠে নেমে পড়ছেন কৃষকরা। কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকালে বীজতলায় ধানের চারা পরিচর্যার পাশাপাশি জমি চাষের কাজ চলছে পুরোদমে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

নদীর পাড়ে, খালের ধারে, রাস্তার পাশের জমিতে, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা। কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে জলসেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে কোথাও চলছে জমি চাষের কাজ। আবার বোরো ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। চলছে জমি প্রস্তুত, খেত পরিচর্যা আর বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করার কাজ।

কৃষকরা বলছেন, প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে চলতি মৌসুমে বাম্পার বোরো উৎপাদন হবে। তবে গ্রামে বিদ্যুৎ সমস্যা থাকলেও যমুনা নদীর চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই কৃষকের। ডিজেল সমস্যা আর অকাল বন্যা দেখা না দিলে চরে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তারা।

সিরাজগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় ২২ হাজার ১৫৫ হেক্টর, তাড়াশ উপজেলায় ২২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, উল্লাপাড়া উপজেলায় ২৯ হাজার ৩৩০ হেক্টর, শাহজাদপুর উপজেলায় ২২ হাজার ৫০ হেক্টর,  বেলকুচি উপজেলায়  ৭ হাজার ৪৯০ হেক্টর,  কামারখন্দ উপজেলায় ৬ হাজার ৯শ ৬৫ হেক্টর, চৌহালী উপজেলায় দুই হাজার ৮৩৪ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৭১৫ হেক্টর, কাজিপুরে ১২ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এদিকে বোরো আবাদকে সামনে রেখে উত্তরাঞ্চলের জন্য ইতোমধ্যে ইউরিয়া সার বাঘাবাড়ি বাফার গুদামে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এসব সার কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হবে।

বাঘাবাড়ী বিসিআইসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়। এবার স্বল্পসময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সার বাঘাবাড়ি বন্দরে মজুদ করে রাখা হয়েছে। যাতে চাহিদা দেখামাত্র কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হবে।

চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ১৫৯ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো সমস্যা না হলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে সিরাজগঞ্জে।

জেলার তাড়াশ ও রায়গঞ্জ এলাকায খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকদের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। ফলে স্থানীয় মহজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে এখানকার কৃষকদের। জেলার তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষকরা অধিক সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে জমি তৈরী ও বীজের ব্যবস্থা করে বোরো আবাদ করছে কৃষকেরা।

সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বড় কয়রা এলাকার কৃষক সিরাজ উদ্দিন বলেন, শুকনো মৌসুমে বোরো ধানের জমিতে দিনে তিনবার করে পানি দিতে হয়। তখন যদি ডিজেল সংকট থাকে তাহলে আমরা বিপদে পড়ে যাব।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, যমুনার চরে জমিতে সেচের জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে চরের জমিতে সেচ দিতে হয়। ডিজেল সংকট আর অকাল বন্যা না হলে চরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।

সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ সুবিধা দিতে শহরের চাইতে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হবে না। সেচ মৌসুমে নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যাতে বোরো আবাদে সমস্যা না হয়।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় বীজতলার চারা ভালো হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলায় ৮ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির চারা দিয়ে এবার বোরো আবাদ হবে। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এবার। এজন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!