• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিরিয়া যুদ্ধের মাশুল দিতে হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের


ফিচার ডেস্ক নভেম্বর ২১, ২০১৬, ০৬:৩৮ পিএম
সিরিয়া যুদ্ধের মাশুল দিতে হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের

সিরিয়ার বিদ্রোহী অধুষ্যিত পূর্বাঞ্চলীয় শহর আলেপ্পোতে রোববার সরকারি বাহিনীর এক ব্যারেল বোমা হামলায় শেষ হয়ে গেছে ছয় সদস্যের একটি পরিবার। এদিকে আসাদ বাহিনীর গোলা নিক্ষেপের প্রতিবাদে পাল্টা হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহীরা। তাদের ছোড়া গোলায় নিহত হয়েছে স্থানীয় একটি স্কুলের আট শিক্ষার্থী।

আলেপ্পোর দুই চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোববারের ছোড়া গোলায় ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করেছে সরকারি বাহিনী। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউমম্যান রাইটস গোলা নিক্ষেপের খবর নিশ্চিত করলেও ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহারের খবর নিশ্চিত করতে পারেনি। ওই গ্যাস ব্যবহারের সংবাদ অস্বীকার করেছে আসাদ সরকারও।

তবে ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করা হোক বা না হোক- হামলাগুলোর শিকার হয়েছে শিশুরা। বিদ্রোহীদের গোলার আঘাতে যে আট শিশু প্রাণ হারিয়েছে তাদের সবার বয়স ছয় থেকে ১২ বছরের মধ্যে। গত মঙ্গলবার থেকে আলেপ্পো দখল-পুনর্দখলের লড়াইয়ে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যাদের একটি বড় অংশই শিশু।

সিরিয়ায় জাতিসংঘের দূত স্টাফেন ডি মিসতুরা রোববার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আলেপ্পো সঙ্কট সমাধানের সময় চলে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাস টানা হামলার পর আলেপ্পোর পূর্বঞ্চলে হামলা সাময়িক বন্ধ করেছিল সিরিয়ার সামরিক বাহিনী এবং রাশিয়ার বিমান বাহিনী। তবে মঙ্গলবার আবার তারা শুরু করে সেই হামলা।

নতুন করে হামলা চালানো হচ্ছে হাসপাতালগুলোতেও। বর্তমানে আলেপ্পোর প্রায় কোনো হাসপাতালই আর কাজ করছে না। এদিকে ৫ বছরের ক্ষমতার লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় খেসারতটা দিচ্ছে শিশুরা। সিরিয়ার যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮০ শতাংশ শিশু। চলতি বছরের মার্চে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় শিশুদের জোর করে রোজগারে নামিয়ে দেয়ার ঘটনাও লাফিয়ে বাড়ছে।

ইউনিসেফের আঞ্চলিক প্রধান পিটার সালামা জানান, দিনের পর দিন চলা যুদ্ধে সাধারণ মানুষের দারিদ্র এতটাই বেড়ে গেছে যে, পেটের দায়ে মা-বাবারা শিশুদের কাজে নামিয়ে দিচ্ছেন। কিংবা তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে অস্ত্র। টাকার বিনিময়ে বহু নাবালিকাকে জোর করে বিয়েও দিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার কথায়, ‘এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি এখনই ঠেকানো উচিত। আসুন সবাই মিলে সিরিয়ার ভবিষ্যত্‍‌ প্রজন্মকে রক্ষা করি। ওই শিশুদের একটা ভবিষ্যত্‍‌ রয়েছে।’

যুদ্ধে নিগ্রহের শেষ নেই সিরিয়াবাসীর। ৭০ ভাগ মানুষই পায় না বিশুদ্ধ পানি। ৬০ লাখ শিশুসহ দেশটিতে বর্তমানে অবস্থানরত ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে মানবিক সহায়তা দিতে ২০১৬ সালেই দরকার ৩.২ বিলিয়ন ডলার। দেশটির প্রতি তিনজন মানুষের একজন পায় না পর্যাপ্ত খাবার। ২০ লাখেরও বেশি শিশু বঞ্চিত শিক্ষার অধিকার থেকে। আর দারিদ্য সীমার নিচে বাস করে পাঁচ জনে চারজন। রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে কোনো পক্ষই রাজি হচ্ছে না পরাজয় মেনে নিতে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বারবার আহ্বান সত্ত্বেও সাড়া দিচ্ছে না কেউ।

আরব বসন্ত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দেরায় গণতন্ত্রপন্থীরা শুরু করে শান্তিপূর্ণ একটি বিক্ষোভ। এরই এক পর্যায়ে নিজেদের রক্ষার জন্য বিরোধীরা হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর একটি দল সরকারের বিরুদ্ধে গঠন করে বিদ্রোহী ব্রিগেড। ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ।

যুদ্ধে ইরান, রাশিয়া, সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো আঞ্চলিক এবং বিশ্বশক্তিগুলোর অংশগ্রহণ একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আসাদ কিংবা বিদ্রোহীদের পক্ষে তাদের সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন যুদ্ধকে আরো তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে। প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় সিরিয়া।

বিদেশি শক্তিগুলো দীর্ঘস্থায়ী করেছে সিরিয়ার সঙ্কট। একদিকে বাশার বাহিনী, বিদ্রোহী গোষ্ঠি এবং কুর্দিদের মধ্যে চলতে থাকে যুদ্ধ। অপরদিকে চলতে থাকে রাশিয়ার আর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলা। আসাদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয় রাশিয়া আর ইরান। অপরদিকে ‘মডারেট’ বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ আরএস

Wordbridge School
Link copied!