• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিসি ক্যামেরায়ও সুফল পাচ্ছে না পুলিশ


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১৫, ২০১৬, ০৯:৩৪ এএম
সিসি ক্যামেরায়ও সুফল পাচ্ছে না পুলিশ

সারা দেশে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। অনেক ঘটনারই সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করছে পুলিশ। তবে সেসব ফুটেজ থেকে কোনো ঘটনারই রহস্য উদঘাটন কিংবা আসামি ধরতে পারছে নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

রাজধানীসহ দেশের ১২ মহানগরীতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ঘটনার পর ঘটনাস্থল কিংবা  এর আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেও কাঙ্খিত সুফল মিলছে না।

কোটি কোটি টাকার ব্যয়ে এই প্রকল্প পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নেয়া হলেও ক্যামেরার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফুটেজের দৃশ্য ও ছবি পরিষ্কার না হওয়ায় অপরাধীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনাস্থলে সিসিটিভি থাকায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও কোনো একটি মামলারই কূলকিনারা হচ্ছে না।

গত ৫ জুন চট্টগ্রামে পুলিশের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু খুনের পর সিসি ক্যামেরায় ঘাতকদের মোটরসাইকেলে চলাফেরা ও অনুসরণকারীর ফুটেজ রয়েছে বলে  দাবি করে পুলিশ। কিন্তু অস্বচ্ছ ওই ফুটেজের কারণে সপ্তাহ পার হলেও তদন্তে সন্তোষজনক সুফল মিলছে না। চলছে অনুমাননির্ভর তদন্ত। ফুটেজের সূত্র ধরে একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও, ওই যুবক ফুটেজে দেখা যুবক কিনা, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

এর আগে ২৫ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর ধানমন্ডির কলাবাগানের তেঁতুলগলি এলাকার ৩৫ নম্বর ‘আছিয়া নিবাস’ নামে দোতলা ভবনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান (৩৫) ও তার বন্ধু তনয় মজুমদার (৩৩) খুন হন। ওই ঘটনার পর সিসি ক্যামেরার যে ফুটেজ পাওয়া যায়, তাতে সবকিছু অস্পষ্ট। অস্বচ্ছ ওই ফুটেজের সূত্র ধরে ওই গলির বাসিন্দা সমীত ও নিশান নামে দুই যুবককে র‌্যাব-পুলিশ দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সুফল মেলেনি।

সেই জোড়া খুনের ঘটনায় ঘাতকদের পালানোর ছবি পাশের একটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ফুটেজের দৃশ্য অস্পষ্ট হওয়ায় ঘটনার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি। সেই ফুটেজ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের অনেক সময় পেরিয়ে গেছে।

২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ৯০ নম্বর সড়কে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজার খুনের পর ওই এলাকার দুই শতাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখেও মিলেনি ক্লু। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্য অস্পষ্ট হওয়ায় ঘাতকরা আজও চিহ্নিত হয়নি।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি দুপুরে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের সামনে শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিবুর রহমান হাবিব হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য ক্লোজসার্কিট ক্যামরায় ধরা পড়ে। সেই ফুটেজ দেখে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১০ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে সেই ফুটেজও জব্দ করে পুলিশ। তবে মামলার তদন্তে অগ্রগতি এখনও তিমিরেই।

গত ৩০ মার্চ চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা সোহেল আহমেদ (২৪) খুনের দৃশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলার সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়। কিন্তু সে মামলারও অগ্রগতি নেই। বিবিএর ৩১তম ব্যাচের ওই শিক্ষার্থীর ঘাতকরা আড়ালেই রয়ে গেছে। গত ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম কলেজে সংঘর্ষের ঘটনা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। কিন্তু পুলিশের তদন্ত ফল শূন্য।

অবশ্য সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে ২০১৫ সালের ৭ মে চট্টগ্রামে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক মুরাদপুর শাখার নৈশপ্রহরী ইব্রাহীমকে হত্যা এবং ব্যাংক ডাকাতি চেষ্টায় জড়িত চারজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

এদিকে ঢাকা মহানগরীতে পুলিশ সিসিটিভি লাগানোর প্রকল্প গ্রহণের ১০ বছর পর কাজ শুরু হয়। তবে তা শেষ হয়নি ৯ বছরেও; বরং রোদে পুড়ে ও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে ১৫৫টি ক্যামেরার প্রায় সবকটি।

এ ছাড়া বিপণিবিতান ও অভিজাত এলাকা সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি স্থাপন করলেও এর সুফল মিলছে না। এরপরও প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়াতে  ঢাকার রাস্তার প্রতিটি পয়েন্ট ও মোড়ে সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।

ডিএমপি সূত্র জানায়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও যানজট কমাতে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের আধুনিকায়ন ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য ১৯৯৭ সালে ৬১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর ৫৯টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১৫৫টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনও করে। এআইজির (টেলিকম) তদারকিতে আবদুল গণি রোডে রয়েছে এর কন্ট্রোল রুম।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!