• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সীমান্তে বেড়েই চলেছে ইয়াবা তৈরির কারখানা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬, ০৪:৩৪ পিএম
সীমান্তে বেড়েই চলেছে ইয়াবা তৈরির কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে মরণনেশা মাদক ইয়াবা ট্যাবলেট উৎপাদন কারখানা। ওসব কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা ট্যাবলেটের মূল বাজার বাংলাদেশ। কারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি দেশের সর্বত্র এ মাদক ছড়িয়ে দিতে ইতিমধ্যে স্থল ও সমুদ্র পথে ইয়াবার চালান বাড়ানোর রুটও বেড়েছে। ইতিপূর্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ইয়াবা চোরাচালানে মূল গডফাদার ও সিন্ডিকেট সদস্যদের তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে যথাযথ কোনো ব্যবস্থা না গ্রহণ করায় ইয়াবাচক্র বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে এদেশের নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার খেলায় মেতেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এদেশ একটি বিকলাঙ্গ জাতিতে পরিণত হতে খুব বেশিদিন সময় লাগবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সূত্র মতে, একটি অপরাধী ও চোরাচালানি চক্র দেশের সর্বত্র মরণনেশা ইয়াবা ছড়িয়ে দিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এদেশের কক্সবাজার ও এর আশপাশের উপকূলবর্তী এলাকাজুড়ে অবৈধ ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য চলছে। এ ব্যবসায় হাত দিলেই টাকা। ধরা না পড়লে সহজেই লাখপতি ও কোটিপতি হওয়ার হাতছানিতে একশ্রেণীর মানুষ উন্মাদের মতো এ অবৈধ ব্যবসার পেছনে ছুটছে। ইতিপূর্বে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন ওপারে আগে ৩৫টি স্থানে ৩৭ ইয়াবা উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছিল। ইতিমধ্যে তা ১৮টি স্থানে ৪০ কারখানায় উন্নীত হয়েছে বলে সীমান্তের ওপারের বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত করেছে। ওসব ইয়াবা উৎপাদিত হওয়ার পর ৪২ থেকে ৪৫টি রুট দিয়ে কক্সবাজার অঞ্চলে প্রবেশ করে। তারপর আরো একাধিক রুট হয়ে সেগুলো দেশের বিভিন্নস্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। তবে মূলত চট্টগ্রামই ইয়াবা পাচারের মূল রুটে পরিণত হয়েছে।

সূত্র জানায়, মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ইয়াবা ট্যাবলেট উৎপাদনে কারখানা গড়ে উঠার বিষয়টি মিয়ানমার সরকার অফিসিয়ালি স্বীকার করতে রাজি নয়। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ওসব কারখানা সীমান্তের কোন কোন স্থানে গড়ে উঠেছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু সেদেশের সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছে না। বরং মিয়ানমারের  সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ফলে মিয়ানমারের সরকার সেদেশের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষীবাহিনী অর্থাৎ নাসাকা ও বিজিপির একশ্রেণীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন হতে অনিচ্ছুক। নাসাকা ও বিজিপির একশ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তারাই সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ইয়াবা ট্যাবলেট উৎপাদন ও বাংলাদেশে চোরাপথে পাচারের কাজে চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে সরাসরি জড়িত।

বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলজুড়ে ইয়াবার চালান নিয়ে বিভিন্ন নৌযানের আনাগোনা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। সড়ক পথে এমন কোনো যানবাহন নেই যেখানে কোনো না কোনো যাত্রী বা হেলপারের শরীর তল্লাশিতে ইয়াবা মিলছে না। শুধু তাই নয়, রোগী বহনের কাজে নিয়োজিত এ্যাম্বুলেন্স, মাছ, শাকসবজি, কাঠসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের যানবাহনেও বিশেষ কায়দায় পরিবাহিত হচ্ছে ইয়াবার চালান। এর পাশাপাশি সাগর ও নৌপথেও বিভিন্ন নৌযানযোগে কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ হয়ে ইয়াবার চালান চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। ইয়াবা সেবনকারীরা এখন জেলা শহর থেকে উপজেলা এমনকি গ্রামপর্যায়েও ক্রমাগত আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

এদিকে সর্বনাশা ইয়াবার ছোবল থেকে রক্ষা পেতে দেশে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হলেও তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং ব্যাপকভাবেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে চালানে চালানে ধরা পড়ছে ইয়াবা ট্যাবলেট। কিন্তু এর বাইরে আরো অসংখ্য চালান পৌঁছে যাচ্ছে গন্তব্যে। পরবর্তীতে বিভিন্ন হাত ঘুরে বহনকারী বিশেষ করে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশের হাতে চলে যাচ্ছে। অথচ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত একাধিক বাহিনীর সদস্যরাও ইয়াবা পাচার রোধ কার্যক্রমে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। যদিও অভিযোগ রয়েছে- আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অসৎ কিছু সদস্যের যোগসাজশের কারণেই মিয়ানমার সীমান্ত গলিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ইয়াবার চালান ঢুকছে স্থল পথে ও সীমান্ত পথে। দেশে ইয়াবার চালান ঠেকানো দিনকে দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!