• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে আগুন: পুড়েছে ২ একর ভূমির গাছ


বাগেরহাট প্রতিনিধি মে ২৬, ২০১৭, ০৯:৫৪ পিএম
সুন্দরবনে আগুন: পুড়েছে ২ একর ভূমির গাছ

বাগেরহাট: এক বছরের মাথায় বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৬ মে) সকাল ১১টার দিকে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেষ্ট ক্যাম্পের আওতাধীন মাদ্রাসারছিলায় এলাকায় আগুনে দাউ-দাউ করে বন জ্বলতে দেখা যায়।

আগুনে প্রায় ২ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বনসংলগ্ন উত্তর রাজাপুর গ্রামের ২শতাধিক লোকসহ শরণখোলা, বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট কাজ করে। বিকেল ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান সুন্দরবনের ধানসাগর রস্টশন অফিসার মো: হুমায়ুন কবির।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে আগুনদস্যুদের চিহিৃত করতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।  

চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এসিএফ মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে চঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা নুরুজ্জামান ও ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে সদস্য করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ২৮ মার্চ থেকে শুরু করে চাঁদপাই রেঞ্জে মাত্র এক মাসে চার বার নাশকতার আগুনে কয়েক কোটি টাকার বনজ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারও সেই একই এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা বলে সন্দেহ করছেন এলাকাবাসী ও সুন্দরবন বিভাগ।

আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত শরণখোলার ধানসাগর ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন খান জানান, সকাল ১১টার দিকে তারা সুন্দরবনে আগুন লাগার খবর পান। পরে এলাকার লোকজন নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান।

স্থানীয়রা কলস-বালতি নিয়ে পাশের খাল থেকে পানি নিয়ে প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। আগুন যাতে সুন্দরবনের ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য চারপাশে ফায়ার লেন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়।

দুপুর দুইটার দিকে বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মাসুদ শেখের নেতৃত্বে বাগেরহাট, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কোথাও কোথাও ধোয়ার কুন্ডলি উঠতে দেখা যাচ্ছে। আগুনে প্রায় ২-৩ একর বনের ছোট গাছপালা ও লতাগুল্ম পুড়েছে বলে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া প্রত্যক্ষশদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন।

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. মেহেদিজ্জামান জানান, বেলা ১১টার দিকে তারা আগুনের খবর পেয়ে ঘহটনাস্থলে ছুঁটে যান। বনকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় শত শত মানুষ কলস-বালতি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। আগুন এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কোথাও কোথাও ধোয়ার কুন্ডরী পাকিয়ে আগুন জ্বলে উঠছে। আগুন লাগার নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে এ আগুন নাশকতার বলেই প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতামূলক চারবার অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়। এর মধ্যে ২৭মার্চ ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্পের সিকদারের ছিলায়, ১৩ এপ্রিল পঁচা কোরালিয়া বিলে, ১৮ এপ্রিল আব্দুল্লাহর ছিলায় এবং সর্বশেষ ওই বছরের ২৭ এপ্রিল তুলতলার বিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের সুন্দরবন সংলগ্ন উত্তর রাজাপুর গ্রামের এক শ্রেণির মৌসুমী মৎস্য শিকারী সুন্দরবনের মিঠা পানির মাছের বিল তৈরী করার জন্য বনে আগুন দিয়ে থাকে। প্রতি বছরই ধানসাগর স্টেশনের এসব এলাকায় ওই অবৈধ মাছ শিকারীরা বনে আগুন লাগায়। গত বছর চার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৮ জনকে আসামি করে শরণখোলা থানা ও বাগেরহাট আদালতে ৩টি মামলা দায়ের করে সুন্দরবন বিভাগ। ওই সব মামলায় আসামি শাসকদলের প্রভাবশালীদের সহায়তায় জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবারও সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি লুটের নেশায় মেতে উঠেছে।  

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ

Wordbridge School
Link copied!