• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রিম কোর্ট বারের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন


আদালত প্রতিবেদক মে ২, ২০১৭, ০৫:৫৪ পিএম
সুপ্রিম কোর্ট বারের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: বিচার বিভাগ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের মন্তব্য প্রসঙ্গে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে বিএনপিপন্থীরা সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। অপরদিকে বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যের প্রতিবাদে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে শুরুতে বিএনপিপন্থীরা বারের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন। এদিন সকালে সমিতির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বক্তব্য দেন তারা। পরে বারের পক্ষ থেকে আওয়ামী পন্থিরা ভিন্নমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন।

দুপুর সোয়া ১টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি বলেছেন, প্রশাসন কোনো দিনই চায়নি এখনও চায় না বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক। এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘অন্য কোনো দেশে প্রধান বিচারপতিরা প্রকাশ্যে এত কথা এত উষ্মা প্রকাশ করেন না’।

আইনমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিচার বিভাগ সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য সম্পর্কে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, এখানে আমরা বলতে চাই বিচারিক দায়িত্ব কোনো গোপন বিষয় নয়। মাসদার হোসেন মামলার পরে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে অনেক কথা হয়েছে। বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা, বিধি প্রণয়নের জন্য সর্বোচ্চ আদালত থেকে অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও চাকরির বিধি-বিধান, গেজেট আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। সরকার এজন্য মোট ৬৭ বার সময় নিয়েছে। সুতরাং প্রধান বিচারপতির গোপনে কিছু বলার নেই। সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক তা চায় না, সময়ক্ষেপণ তারই প্রমাণ।

সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আইন প্রণয়নে সংবিধান মানা হয় কি না এবং নির্বাহী বিভাগের কাজ সংবিধান অনুযায়ী হয় কি না, তা দেখার দায়িত্ব। অন্য দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে বলেই তাদের কথা বলতে হয় না বলে দাবি বার সভাপতির।

জয়নুল আবেদীন বলেন, যদি আইন বিভাগ সংবিধান মোতাবেক আইন প্রণয়ন না করেন বা সংবিধান পরিবর্তন করেন, সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার রয়েছে সেই আইনকে বাতিল করার। রাষ্ট্রের আইন বিভাগ স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারছে কি না, শাসন বিভাগ আইন যথাযথভাবে পালন করছেন কি না সেই সব বিষয় দেখার এখতিয়ার এবং দায়িত্ব বিচার বিভাগের। তাই আমরা সকল মহলকে বিচার বিভাগ সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মন্তব্য করার অনুরোধ করছি।

এ সময় আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা, সহ-সম্পাদক শামীমা সুলতানা দীপ্তি এবং কার্যনির্বাহী সদস্য মো. হাসিবুর রহমান, মহসিনা আক্তার ও শেখ তাহসিন আলী উপস্থিত ছিলেন।

একই ভেন্যুতে এরপর বারে আওয়ামীপন্থী অংশের সদস্যদের পক্ষে সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. অজি উল্লাহ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। বারে আওয়ামীপন্থীরা সংখ্যাঘিষ্ঠ হওয়ায় রেজুলেশনকে বিভক্ত দাবি করে তাদের এই মতামত দেন।

লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট অজি উল্লাহ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্মানিত সভাপতি ও সম্পাদক মোহদয়ের উদ্যোগে যে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। কারণ, যে সকল তুচ্ছ অজুহাতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে, তাতে বিচার বিভাগেরই মর্যাদার হানী হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনের উদ্দ্দেশ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এই ধরনের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বার কিংবা বিচার বিভাগের কোন স্বার্থ রক্ষা হয়নি হবেও না।

বিচার বিভাগ নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্য সমর্থন করে তিনি বলেন, সরকারের কেউই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় কিংবা বিচার বিভাগের কোন ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এম কোন বক্তব্য প্রদান করেন নাই, যাতে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক মহোদয়ের আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সম্পাদক মহোদয় সমিতির কার্যকরি অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। আমরা তাদের সম্মেলনের তীব্র নিন্দা জানাই।

পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করলেও সুপ্রিম কোর্ট বারে কোন বিভক্তি নেই বলেও দাবি করেন মো. অজিউল্লাহ। আইনজীবীদের পেশাগত বিষয়ে তারা এক বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হওয়ায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গি রয়েছে।

এ সময় কোষাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম হিরু, সহকারি সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম এবং কার্যনির্বাহী সদস্য নূরে আলম উজ্জল, কুমার দেবুল দে ও হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!