• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুষ্ঠু ভোটের চ্যালেঞ্জ আজ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩০, ২০১৮, ০৭:২৫ এএম
সুষ্ঠু ভোটের চ্যালেঞ্জ আজ

ঢাকা : দেশের তিন সিটি রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে ভোট আজ সোমবার (৩০ জুলাই)। ইতোমধ্যেই এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণাও শেষ হয়েছে। আর ভোট সুষ্ঠু, অবাধ, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরণের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। এখন শুধু বাকি, নির্বাচন কমিশনের ভোট নেওয়া আর ভোটারদের ভোট দেওয়ার পালা।

নির্বাচনী এলাকায় জোরদার করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। এমন যাবতীয় প্রস্তুতি সত্বেও বিরোধী প্রার্থীদের অভিযোগের তীর খোদ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বিএনপি প্রার্থীরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের আচরণ সম্পর্কিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না কমিশনের কাছ থেকে। কমিশনের এমন অবস্থান নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।

সু শাষনের জন্য নাগরিক সুজন বলেছে, ভোট সুষ্ঠু করতে হলে কমিশনকে তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সাহসী ব্যবহার করতে হবে। তারা যদি খুলনা ও গাজীপুরের মত এবারো ঢিলেঢালা ভূমিকায় থাকে তাহলে এই তিন সিটিতেও নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।

অন্যদিকে তিন সিটির সাধারণ ভোটারদের একটাই চাওয়া, তারা যেনো নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন এবং নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চাইছেন, তিন সিটিসহ সব নির্বাচন যেন শতভাগ সুষ্ঠু হয়। এ বার্তা তিনি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দিয়েছেন। সরকার চায় ইসির ভাবমূর্তি যেন সমুন্নত থাকে।

তবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচনা করে সুজন বলেছে এসব নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে পারেনি ইসি।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায় সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আসন্ন তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে। এর কারণ হলো নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমান লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারছে না। দেখা যাচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্ত এক্ষেত্রে কমিশন কারো বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার হয়রানি করা হচ্ছে। কমিশন সিটিগুলোতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করছে না।

সম্মেলনের আরেক বক্তা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, চলতি বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে এক ধরনের নতুন প্রবণতা তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রের বাইরে তেমন সহিংসতা নেই, কিন্ত নির্বাচনটি হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত। মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখছে যে, তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। আবার যে প্রার্থী এক লাখ বা দুই লাখ ভোট পাচ্ছেন তিনি এজেন্ট দিতে পারছেন না। তার মানে কী? সরকারি দল নির্বাচনে আগ্রাসী আচরণ করছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, সব প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের ব্যয়সীমা অতিক্রম করেছে। কোনও প্রার্থী ব্যয়সীমার মধ্যে নেই। পাঁচ বছরে সিটি করপোরেশন বাজেটের চেয়ে বেশি অর্থ প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ের জন্য ব্যয় করছে।

তবে ভোটার আর সরকার প্রধানের চাওয়া আর সংশ্লিষ্টদের শঙ্কাকে পেছনে ফেলে আজকের ভোটকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করাই এখন নির্বাচন কমিশনের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

বিএনপি ও অন্য দলগুলোর অভিযোগ : ভোটের সময়ে সিটিগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাঠানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ- নিরাপত্তার জন্য নয়, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতেই তিন সিটিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। শুধু বিএনপি নয়, নির্বাচনে অংশ নিয়েছে অন্য অনেক দলের প্রার্থীদের অভিযোগ- আওয়ামী লীগ, পুলিশ ও প্রশাসন মিলে তিন সিটিতে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনের পরিবেশই নেই।

সিলেট ও রাজশাহী বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে- তারা ভোট 'ডাকাতি' ঠেকাবে। রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভোট ডাকাতি হলে নির্বাচন কার্যালয়ের ইট খুলে নেবেন।

এছাড়া রোববার সকালে তিনি দলের সকল এজেন্টদের প্রতি ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নির্দেশনায় এজেন্টদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘আপনি পানি, শুকনা খাবার, পেন নিয়ে সকাল সাতটায় প্রস্তুত থাকবেন, আপনার ফরম প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষর করে আপনার পোলিং এজেন্ট হওয়ার বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে।’

সিলেটে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীও সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভয়’ দেখানোর অভিযোগ এনে বলেছেন, শত ভয়ের মুখেও মাঠ ছাড়বেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার মৃত্যু পর্যন্ত আমি এবং আমার দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের মাঠ থেকে এক মিনিটের জন্য, এক সেকেন্ডের জন্য নড়ব না। রেজাল্ট নিয়ে আমরা বাড়ি যাব।’

বরিশালেও নেতাকর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার, হয়রানিসহ নানা ধরণের ভয়ভীতির অভিযোগ এনেছেন বিএনপি প্রার্থী মজিবুর রহমান সরওয়ার। শনিবার প্রচারণার শেষসময়ে তিনি এও বলেছেন, এভাবে নির্বাচন করা যায় না। এখনও সময় আছে, গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ করুন।’

শুধু বিএনপির প্রার্থী পর্যায়েই নয় দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকেও এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। গতকাল রোববার সকালে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী খুলনা ও গাজীপুরের মত এই তিন সিটিতেও ভোট ডাকাতির আশঙ্কা জানিয়েছেন। রিজভীর এই আশঙ্কা নাকচ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, যেকোনো নির্বাচনে পরাজয়ের সম্ভাবনা থাকলেই বিএনপি সেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মিথ্যাচার করে।’

বিস্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইসির : এদিকে ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে তিন সিটিতেই স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে শনিবার সকাল থেকে টহলে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সিলেটে ১৫ প্লাটুন, রাজশাহীতে ১৫ প্লাটুন ও বরিশালে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নেমেছে।

এছাড়া প্রত্যেক সিটিতে আরো চার প্লাটুন করে বিজিবি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব সিটিতে ভোট শেষ না হওয়া অবধি বহিরাগতদের আসা-যাওয়াও নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন বলছে, সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে তাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হবে। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল উপস্থিতি থাকবে। ইতিমধ্যে তিন সিটিতে নেমেছে ৪৪ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ঢাকা থেকে পুলিশ কর্মকর্তাদেরও পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া তিন সিটিতেই অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি সদস্যরা ৩১শে জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। বিজিবির তথ্য কর্মকর্তা মহসিন রেজা জানান, প্রয়োজনে আরও বিজিবি মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত।

রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ১৩৮টি ভোটকেন্দ্র ঘিরে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসারসহ প্রায় দুই হাজার ফোর্স রাজশাহীতে রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভোটের মাঠে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবেন।

সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে সিলেটে দুই হাজার ৯৪৮ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। সিলেটে ১৪ প্লাটুন বিজিবির সঙ্গে র‌্যাবের ২৭টি দল কাজ করবে। ১৩৪টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতে ২২ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

বরিশালে ২ হাজার ১৩ জন পুলিশের পাশাপাশি আর্মড পুলিশের ১৫৬ জন সদস্য মাঠে থাকবেন। এ ছাড়াও ২ হাজার ১৫৯ জন আনসার সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, তা নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী র‌্যাব কাজ করছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!