• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সুসময়েও শরিকদের পাশে রাখবে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৪, ২০১৭, ০৬:০০ পিএম
সুসময়েও শরিকদের পাশে রাখবে বিএনপি

ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অটুট রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি মনে করেন, সরকারের ভেতরের অবস্থা ভালো না, তাই জোট ভাঙার জোর চেষ্টা চালানো হবে। কোনোভাবেই যেন জোট না ভাঙে, সে ব্যাপারে শরিক ও দলীয় নেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সর্বশেষ ২০ দলীয় জোট নেতাদের বৈঠকে এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকে জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ২০ দলীয় জোটের শরিকরা বিএনপির দুঃসময়ে পাশে আছে। ভবিষ্যতে সুসময়েও পাশে থাকবে। এমনকি জোট শরিকদের নিয়েই নির্বাচনে যাবেন তারা।

সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ে সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বৈঠকে উপস্থিত জোটের শীর্ষ নেতারা জানান, খালেদা জিয়া পরামর্শ দিয়েছেন, এখন থেকে আন্দোলন শব্দটি নয়, রাজনৈতিক কর্মসূচি শব্দটি সামনে আনতে হবে। 

জোট নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, কোনোভাবেই জোট ভেঙে সরকারের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। সরকারের অনেক টাকা আছে। সরকার অনেক টোপ দেবে; কিন্তু আপনারা যাবেন না। কোনোভাবেই যেন জোট না ভাঙে, সে ব্যাপারে শরিক দলীয় নেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

সূত্র জানায়, বৈঠকে খালেদা জিয়াকে আরো বেশি গণমুখী কর্মসূচি নেয়ার পরামর্শ দেন জোট নেতারা। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, কর্মসূচি দেয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা ও পরিস্থিতির ওপরও বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করবে। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীসহ ১৭টি শরিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এর মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টি ও পিপলস লীগের নেতারা। তবে লেবার পার্টিকে সংগঠনটির উপদলীয় কোন্দলে বিভক্ত নেতৃবৃন্দের কারণে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এ প্রসঙ্গে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জোট নেতারা। এছাড়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মতুর্জা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে যাবেন না। এমনকি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই নির্বাচন হতেও দেবেন না।

সংসদ ভেঙে দেয়া ও সেনাবাহিনী মোতায়েন: জোটের ওই বৈঠকে জোটের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে শরিক দলের নেতারা বলেছেন, আগামীতে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের মেয়াদের তিন মাস আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন থেকে কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামাতে হবে।

এসব দাবির প্রতি জনমত গঠনে বিভাগ ও জেলায় সফর ও সমাবেশ করা উচিত। নেতাদের বক্তব্যের প্রতি সম্মতি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, নতুন বছর নয়- এ মুহূর্ত থেকে জনমত গঠনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জোট নেতাদের আশ্বস্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ২০ দলীয় জোটের শরিকরা বিএনপির দুঃসময়ে পাশে আছে। ভবিষ্যতে সুসময়েও পাশে থাকবে। এমনকি জোট শরিকদের নিয়েই নির্বাচনে যাবেন তারা।

বিভাগীয় শহরে সমাবেশ : জোটের বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আট বিভাগীয় শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে সফর হতে পারে। জোটের শরিক নেতাদের কাছে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা জানতে চাইলে তারা সারাদেশে সফর করে সমাবেশ করার দাবি জানালে খালেদা জিয়া এ সফরের কথা বলেন।

তাদের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন দিয়ে তিনি বলেছেন, হাতে বেশি সময় নেই। নির্বাচন দ্রুত চলে আসছে। তাই সফরের আগে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজ নিজ দলের মধ্যে আলোচনা করে এখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। সামনে সব কর্মসূচিতে শরিক নেতাদের অংশ নিতে হবে। নতুন বছরের শুরুতে বিভাগ ও জেলা সফর শুরু হতে পারে।

এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দলীয় সরকার নয়- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জনমত গঠন করা। ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে এসব সফর হবে। সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে নতুন কর্মসূচি দেয়া নিয়েও আলোচনা হয়।

জোট ভাঙা যাবে না : জোটের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু ঘটতে পারে। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। এজন্য সরকার চাইবে ২০ দলীয় জোট ভাঙতে। সরকারের পক্ষ থেকে টোপ দেয়া হবে; কিন্তু সেই টোপে সাড়া দেয়া যাবে না। এমনকি জোটের শরিকদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং থাকতে পারবে না। জোটে যে না থাকবে সে চলে যাবে; কিন্তু জোট ভেঙে যাওয়া যাবে না।

এছাড়া দলীয় একটি সূত্র জানায়, আগামী মাসের ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল দেয়া হয়েছে। এই সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে একক প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আগ্রহী জামায়াতসহ অন্যান্য শরিক দলের কেউ থাকলে নাম দিতে বলেছেন খালেদা জিয়া।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!