• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেই কালরাত, আজও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা


নিয়ন মতিয়ুল আগস্ট ১৫, ২০১৮, ০৪:৫৬ পিএম
সেই কালরাত, আজও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা

ঢাকা: পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের সম্ভাব্য সেনা অভ্যুত্থান সম্পর্কে বিশেষ সূত্রে খবর পৌঁছেছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) কাছে। সেই তথ্য জানার পরপরই ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন ‘র’ প্রধান রমেশ্বর নাথ কাও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুমতি নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সতর্ক করতে। বঙ্গভবনের বাগানে একান্ত আলাপে রাও খবরটি জানালে তার কথার কোনো গুরুত্বই দেননি বঙ্গবন্ধু। বরং রাওকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন, ‘তারা আমার নিজের সন্তান, তারা আমার ক্ষতি করবে না।’ (সূত্র: ভারতের সাপ্তাহিক ‘সানডে’; ১৯৮৯, এপ্রিল ২৩-২৯ সংখ্যা।)

পঁচাত্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তরে কর্মরত স্টিফেন আইজেনব্রাউন দাবি করেন, ১৯৭৫ সালের জুলাইয়ের শেষ বা আগস্টের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করতে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ইউজিন বোস্টারকে পাঠানো হয়েছিল। যেহেতু, একজন রাষ্ট্রপ্রধানের তুলনায় বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল খুবই সাধারণ, ট্রাফিক সিগন্যালে বঙ্গবন্ধুর গাড়ি থামতো, গাড়ির জানালার কাঁচ নামানো অবস্থায় তাকে কখনো কখনো পত্রিকা পড়তে দেখা যেত, সে কারণেই বোস্টার এক সাক্ষাৎকারে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘আপনি যদি তাকে দেখতে যান, তাহলে দেখবেন অবাক দৃশ্য। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা লোকজন তাকে দেখতে ভিড় করে আছে। আমি নিজে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অভিভূত হয়েছি।’ (সূত্র: প্রথম আলো।)

মূলত বঙ্গবন্ধু ছিলেন মাটি আর মানুষের নেতা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। আজ যেমন কঠোর ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়েই চলতে হয় রাষ্ট্রপ্রধানদের; উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পরামর্শে ব্যক্তিগত চলাফেরাও নিয়ন্ত্রিত হয়- এমনটা ছিল না বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে। হিমালয়সম এই নেতা বাঙলার প্রতিটা মানুষকে আপন করে ভাবতেন। গণমানুষের অনুভূতি নিবিড়ভাবে অনুভব করতে পারতেন। তাই বুঝি স্বপ্নেও ভাবেননি সেই আপনমানুষের মাটিতেই কেউ কেউ ঘাতক হয়ে উঠবে, তার রক্তে ভেসে যাবে তিরিশ লাখ প্রাণের রক্তে কেনা আপনভূমি, স্বাধীনভূমি! সেই যে বিশ্বাসহীনতা, নিরাপত্তাহীনতা, বিশ্বাসঘাতকতার বীজ বপন হয়েছিল- আজও তাড়া করে ফেরে এ জাতিকে। কে যে কখন ঘাতক হয়ে ওঠে কে জানে?

তাই তো আজ যখন রাজপথে চলতে গিয়ে ‘ভিআইপি পাসিং’ সিগন্যালে বসে থাকি, তখন সত্যিই ভাবতে অবাক লাগে, এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। রাষ্ট্রনায়ক, জননেতারা কেন এতো অনিরাপদ? কেন তাদের এতো কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে চলাচল করতে হয়? আমরা কি বঙ্গবন্ধুর সময়ে কখনও ফিরে যেতে পারবো? পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। শুধু দেশের বাইরে থাকার কারণেই বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। তার মধ্যে শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু গেল কয়েক দশকে তাকে ২৩ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কেন? পনেরো আগস্টের সেই কালরাত আজও আমাদের কাছে দুঃস্বপ্ন যেন। আজও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা আমাদের রাষ্ট্রনায়কদের। সেই সঙ্গে বিশ্বাসহীনতার সঙ্কট দিন দিন আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে জটিল করে তুলছে। জোর দিয়ে কেউ যে আর বলতে পারছি না, ‘তারা আমার নিজের সন্তান, তারা আমার ক্ষতি করবে না।’

লেখক: সাংবাদিক, [email protected]

সোনালীনিউজ/জেএ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!