• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেই ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী কে কোথায়?


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২, ২০১৬, ০৮:৩৫ পিএম
সেই ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী কে কোথায়?

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পুরস্কার ঘোষিত ভয়ংকর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর কে কোথায় তা নিয়ে ধূম্রজালে রয়েছেন খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর কারো কারো নামে এখনো চাঁদাবাজি হলেও তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। 

২০০১ সালে এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে ভীতসন্ত্রস্ত থাকত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। বাধ্য হয়ে তাদের ধরিয়ে দিতে তৎকালীন জোট সরকার পুরস্কার ঘোষণা করে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত আমলে পুরস্কার ঘোষিত সেই সব শীর্ষ সন্ত্রাসীর খোঁজখবর নেয়া হয় এখনো। যখনই সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা করা হয়, তখনই তাদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম সরকারি খাতায় রয়েছে, বাস্তবে নেই’-এমন প্রবাদের মতোই পুরস্কার ঘোষিত সেই ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর হদিস মিলছে না। 

বিদেশে পলাতক অবস্থায় তাদের নামে খুন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ১৫ বছরেও থামেনি। এ কারণে আগের সেই সব পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সম্পর্কে আজও খোঁজখবর নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন বলেন, দেশে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এখন কোনো আধিপত্য নাই। বর্তমানে কিছু নতুন সন্ত্রাসী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে। তারা ধরাও পড়ছে। তাদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০১ সালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি ঘটে। অপারেশন ক্লিনহার্ট, র‌্যাব গঠন, ক্রসফায়ারের প্রচলন ইত্যাদির ধারাবাহিকতায় আসে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরির কাজ। 

এই প্রক্রিয়ায় জোট সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করে। বিগত ১৫ বছরে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কে কোথায় আছে, তার সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্যই তাদের খোঁজ নেয়া হয় বলে জানা গেছে। পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন। 

এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২৬ জুন পিচ্চি হান্নান নিহত হন ক্রসফায়ারে। আর আলাউদ্দিন নিহত হয়েছেন গণপিটুনিতে। লিয়াকতের কোনো হদিস নাই। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে তাকে। তার পর থেকেই তার আর খোঁজখবর নেই। কালা জাহাঙ্গীর মারা গেছেন না বেঁচে আছেন সে ব্যাপারে কোনো হদিস দিতে পারছে না কেউ।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে পুরস্কার ঘোষণার পর দেশের ভেতর গ্রেফতার হয়েছেন পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল, খোরশেদ আলম ওরফে রাশু, কামাল পাশা, মশিউর কচি, আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস। কারাগারেই রয়েছেন তারা। বহু মামলার মধ্যে কোনো কোনো মামলায় জামিন হয়েছে, আবার কোনো কোনো মামলায় জামিন হয়নি এখনো। এদের মধ্যে জামিনে বের হয়ে গেছেন প্রকাশ নামের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী। জামিনে বের হয়ে ভারতে চলে গেছেন। ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন সুব্রত বাইন। ভারত থেকে পালিয়ে নেপালে যাওয়ার সময় নেপাল  তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আমিন রসুল সাগর অবস্থান করছেন আমেরিকায়। কানাডায় অবস্থান করছেন ইমাম হোসেন। প্রকাশ কুমার বিশ্বাস অবস্থান করছেন কলকাতায়। মোল্লা মাসুদ ও শামিম আহমেদ অবস্থান করছেন কলকাতায়। হারিস আহমেদ অবস্থান করছেন পাকিস্তানে। তানভিরুল ইসলাম জয় অবস্থান করছেন কলকাতায়। জব্বার, মুন্না, জাফর আহমেদ কোথায় অবস্থান করছেন সে ব্যাপারে কারো কাছে কোনো তথ্য নেই।

অনুসন্ধানে মিলেছে, বিদেশে পলাতক থাকলেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন লা-পাত্তা সন্ত্রাসীরাই। প্রতিনিয়ত ভারত থেকে ফোনে বাংলাদেশের বিভিন্নজনকে ফোন করে চাঁদা দাবি করে আসছেন তারা। 

আটটি হত্যাসহ ১৬টি মামলা মাথায় নিয়ে ভারতে আÍগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহদতের নামে মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখনো চাঁদাবাজি হচ্ছে। গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, শাহদতের বর্তমান অবস্থান ভারতের মুর্শিদাবাদে। ভারতের আলীপুর জেলে বন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের নামে রাজধানীর ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুরে চাঁদাবাজি হচ্ছে বলেও তথ্য মিলেছে।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য নগদ অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তাদের আটকের বিনিময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য এই পুরস্কারের টাকা দাবি করেন তৎকালীন পুলিশপ্রধান। কিন্তু কাউকেই এই পুরস্কার দেয়া হয়নি।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দীর্ঘদিনের পুরনো তালিকাটি নিয়ে মাঝেমধ্যেই জটিলতা দেখা দেয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ১৫ বছর আগে ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেন চারদলীয় জোট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করা হলেও পরবর্তী সময়ে চাপের মুখে অপর ১৯ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেননি আলতাফ হোসেন চৌধুরী।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চারদলীয় জোট সরকারের ঘোষিত ২৩ ও অঘোষিত ১৯ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম একত্রিত করে ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করেন জাতীয় সংসদে।

জোট সরকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করার পর ১৫ বছর পেরিয়ে গেছে। এসব সন্ত্রাসী পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে ঘুরে বেড়ালেও তারা চেনেন না বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!