• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সেই ৫৭ ধারার পক্ষেই তথ্যমন্ত্রী ইনু


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭, ০৭:২৭ পিএম
সেই ৫৭ ধারার পক্ষেই তথ্যমন্ত্রী ইনু

ঢাকা: গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন মহল আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করতে জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে তা সংশোধনেরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। কিন্তু এবার খোদ তথ্যমন্ত্রী সেই ৫৭ ধারার পক্ষে নিজের সাফাই গাইলেন।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মিট দ্যা রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি ৫৭ ধারার পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আইসিটি আইনে কিছু সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমার জানা মতে, সাংবাদিককূলের বেশিরভাগই কাজ করছেন। দুই একজন এই আইনের আওতায় পড়েছেন। ২ হাজার ৮০০ এর বেশি পত্র-পত্রিকা আছে, সেখানে কত হাজার সাংবাদিক কাজ করছেন? যদি পরিমাণটা দেখেন, তাহলে এই আইন নিয়ে আপনারা তো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচেছন না।

মিথ্য তথ্য পরিবেশনের দায়ে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ আইন যে পর্যায়ে প্রয়োগ হয়, সেখানে অন্য আইনের মতো কিছু এদিক-ওদিক হতে পারে। অনেক আইনই আছে যেগুলো কার্যকরের সময় কিছু এদিক-ওদিক হয়। কিন্তু আদালতের নজরে আসলে সেগুলো নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়।

আইসিটি আইনের কোনো সাংবাদিক গ্রেপ্তারের পর তা তথ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে তিনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন, বোঝার চেষ্টা করেছেন আসলে কি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইনু।

আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি দাবি করে এই আইনের ১ ও ২ নম্বর ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন সম্পাদক পরিষদসহ গণমাধ্যমকর্মীরা। ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা। ২০০৬ সালে হওয়া এ আইনটি ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুই দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড করা হয়। আর ৫৭ ধারার অপরাধকে করা হয় অজামিনযাগ্য।

সম্প্রচার এবং সাইবার অপরাধ দমন নামে দুটি আইন করা হচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাইবার অপরাধ দমন আইনটা যুগের চাহিদা এটা করবই আমরা। এটা করতে হবে এজন্য, গণমাধ্যম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুরো বাংলাদেশকে স্বচ্ছ কাচের ঘরে পরিণত করছে। সেখানে সব কিছু দেখা যায়। এই কাচের ঘরে রাষ্ট্র থাকে। আরো আছে নারী, শিশু, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি জীবনের গোপনীয়তা। সুতরাং এই কাচের ঘর আমি বন্ধ করব না। সব জায়গায় আলো ফেলেন, কাচের ঘর তৈরি করেন।

ইনু বলেন, নতুন দুটি আইন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেবে। আপনাদের বাক ও ব্যক্তি সমালোচনার যে অধিকার সেটাকে সমুন্নত রেখেই এই আইন হচ্ছে। কোনো ধারা যদি সংবিধানের ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে আইনের ওই ধারা বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং আপনারা নির্ভয়ে থাকুন, নিশ্চিন্তে থাকুন, সাইবার অপরাধ আইন এবং সম্প্রচার আইন গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কোনো অবস্থাতেই মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার সংকোচন আইন নয় এবং হবেও না।

নতুন এসব আইন প্রণয়নের পর আইসিটি আইনসহ এ ধরনের অন্য আইন পরীক্ষা করে বাতিল করা হবে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।

ইলেকট্রনিক মিডিয়াও নবম ওয়েজ বোর্ডে:

গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ শেষ হওয়ার তথ্য তুলে ধরে ইনু জানান, নতুন ওয়েজবোর্ডে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে ইলেকট্রনিক মিডিয়ারকর্মীদেরও যুক্ত করা হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নতুন ওয়েজবোর্ডে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত হবেন। নবম ওয়েজবোর্ড তৈরি করা প্রাথমিক পদক্ষেপ হয়ে গেছে।

নবম ওয়েজবোর্ডে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেটি আমরা পরীক্ষা করছি। ওয়েজবোর্ডের যারা সদস্য হবেন সেসব কর্তৃক্ষকে চিঠি দিয়েছি তাদের প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য, তারা ইতোমধ্যে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। 

আমার দেশ কর্তৃপক্ষ ব্ল্যাকমেইল করছে:

সম্প্রচার স্থগিত থাকা চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভির কার্যক্রম এখনও স্থগিতই আছে জানিয়ে ইনু বলেন, এগুলো আমাদের পর্যালোচনায় আছে, তবে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত বা সুখবর আপনাদের দিতে পারছি না। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করা হয়নি, অনলাইনে চলছে। প্রকাশনা আইনগত জটিলতা আছে। আমার দেশ কর্তৃপক্ষকে বলেছি আইনগত জটিলতা ডিসির অফিস থেকে ঠিক করে নেন। তারা এটাকে না ঠিক করে এটা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেছে আমাদের, স্যরি- কথা বলে প্রসঙ্গ শেষ করেন তিনি।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড:

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা করতে না পারাকে নিজেদের ব্যর্থতা হিসেবে স্বীকার করে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনগত নিষ্পত্তি না করতে পারাটা এটা আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু ব্যর্থতা কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। যেহেতু ব্যর্থতা স্বীকার করছি সূতরাং ব্যর্থতা কাটিয়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে এর বেশি মন্তব্য করার সুযোগ আমার পক্ষ থেকে নাই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আমরা যৌথভাবে ব্যর্থতা কাটিয়ে তোলার সর্বত্মক চেষ্টা করছি।

ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী বক্তব্য দেন। ডিআরইউ মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে নিয়মিত সরকার ও বিরোধীদলের এমপি, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের মুখোমুখি করা হয় গণমাধ্যম কর্মীদের। সেখানে বিভিন্ন ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনার পাশপাশি আগত অতিথিরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!