• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ১৬, ২০১৮, ০২:৫১ পিএম
সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

ঢাকা : রাজধানীর গ্রিনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় ১৯ মাসের এক শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

চিকিৎসায় অবহেলা ও অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগে আরিয়ান নামে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে স্বজনরা কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও ও ভাঙচুর করেছেন। মৃত শিশু আরিয়ানের বাবা সাহাদাত হোসেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী।

সাহাদাতের ছোটভাই শহীদ এলাহী বলেন, ‘বুধবার (১১ জুলাই) থেকে জ্বরে ভুগছিল আরিয়ান। জ্বর না কমায় বৃহস্পতিবার রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশু বিশেষজ্ঞ সুজিত কুমার রায়ের অধীনে পেডিয়াট্রিক ইউনিটের শিশু ওয়ার্ডে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।’

আরিয়ানের রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায়, প্লাটিলেটের উপস্থিতি ৭৬ হাজার। চিকিৎসা চলাকালীন সেটি দাঁড়ায় ১ লাখ ২২ হাজার। শনিবার সকাল থেকে শিশু আরিয়ানের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দুপুরে অবস্থা আরও খারাপ হয়। ওই সময় চিকিৎসকদের ডাকাডাকি করলে কেউ সাড়া দেননি বলে জানান শহীদ এলাহি। বিকেলের দিকে মারা যায় আরিয়ান।

নিহতের চাচা বলেন, রাতে আরিয়ানকে ২৫০ মিলিগ্রামের সাপোজিটার দেয়া হয়। এরপর থেকে অস্বস্তি শুরু হয় আরিয়ানের। চোখ মুখ কালো বর্ণ ধারণ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে তার ডেঙ্গু হয়েছে।

কিন্তু ডেঙ্গুর জন্য যে ধরনের চিকিৎসা দরকার ছিল তা তাকে দেয়া হয়নি। অবস্থার অবনতির বিষয়টি বারবার জানানোর পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। বরং মারা যাওয়ার পর আরিয়ানকে এনআইসিইউ বিভাগে নেয়া হয়।

আরিয়ানের বাবা সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখন ভাই কথা বলার মতো অবস্থায় আমি নেই। আমার আরিয়ানকে জীবিত এনে মৃত অবস্থায় বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। শুধু বলে রাখছি, ওরা আমার আরিয়ানকে মেরে ফেলেছে।’

আরিয়ানের আকস্মিক মৃত্যুর সংবাদের পর হাসপাতালের পঞ্চম তলার ৬০৯ নং ডাক্তারদের বসার কক্ষের গ্লাস ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ স্বজনরা। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুটি গেট আটকে দেয়। খবর পেয়ে ধানমন্ডি থানা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

এ বিষয়ে ধানমন্ডির থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। পরে আরিয়ানের পরিবার মরদেহ নিয়ে চলে যায়। তারা অভিযোগ দিলে মামলা হবে।

এদিকে, কর্তব্যে অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপপরিচালক (এডমিন) ডা. মোজাহের হোসেন বলেন, আরিয়ানের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছিল। ক্লাসিকেল ডেঙ্গুর চিকিৎসায় যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার, চিকিৎসকরা তা নিয়েছিলেন। ‌

তার মৃত্যু কর্তব্য অবহেলা কিংবা ভুল চিকিৎসায় হয়নি। ডাক্তাররা দেখেছে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় এনআইসিইউতে নেয়া হয়েছে। সেখানেই রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় মারা যায় আরিয়ান।

এর আগেও একাধিকবার হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল।

২০১৭ সালের ১৮ মে ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন চৈতি সেন্ট্রাল হাসপাতালে মারা যান। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সহপাঠীরা এসে ওই হাসপাতালে ভাঙচুর করেন। এর প্রতিবাদে বিএমএ কর্মসূচি দেয়। এরপর সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও ঢাবি কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়।

সমঝোতা অনুযায়ী, হাসপাতালে ভাঙচুরসহ অন্যান্য ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কোনও ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যদিকে, ঢাবির পক্ষ থেকেও সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়া হয়।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!