• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে চীন

সোঁনালি আঁশ ঘিরে নতুন আশা


অর্থনৈতিক রিপোর্ট আগস্ট ৫, ২০১৭, ০৯:০৫ পিএম
সোঁনালি আঁশ ঘিরে নতুন আশা

ঢাকা : রাষ্ট্রায়ত্ত পাট কলগুলোর দৈন্যদশা কাটছে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আধুনিকায়নের। এ কারণে দেশের ২৭টি পাট কলের জন্য প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চালু মিলকে আরও সচল করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)।

একইসঙ্গে পাট কলের অভ্যন্তরের উদ্বৃত্ত জায়গায় নতুন করে পাট সংশ্লিষ্ট শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বলছে, এবার পাট উৎপাদন অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভালো। ফলে সোনালি আঁশ নিয়ে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। এ ফসলের ব্যাপক উৎপাদন নিঃসন্দেহে পাট কলের আধুনিকায়নের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

জানা গেছে, পাট কলের অভ্যন্তরে উদ্বৃত্ত জমিতে প্রক্রিয়াজাত পাট পণ্যের নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তিনটি মিলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মিলের উদ্বৃত্ত জমি লিজ প্রদানের মাধ্যমে নতুন শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এরই মধ্যে বিজেএমসি থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিজেএমসির এক কর্মকর্তা জানান, পাটকল আধুনিকায়নের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে পাটের ব্যবহার বাড়ানো, দেশের চাহিদা পূরণ এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পাট পৌঁছে দেয়া। চীন আমাদের সঙ্গে পাট কল নিয়ে কাজ করবে। তারা পাটকল পরিদর্শন করছে। একইসঙ্গে বুয়েটের একটি প্রতিনিধি দলও দেশের পাট কলগুলো পরিদর্শন করেছে।  

ওই কর্মকর্তা জানান, বুয়েট থেকে আমরা যে প্রতিবেদন পাব, সেটি থেকে বোঝা যাবে এসব মিল আধুনিকায়ন করতে কত টাকার প্রয়োজন হবে। তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বলা যাবে চীন আমাদের দেশের পাটকল আধুনিকায়নের জন্য কত টাকা বিনিয়োগ করবে। তিনি বলেন, চীন ছাড়াও আমাদের নিজস্ব আর্থায়নে তিনটি মিল আধুনিকায়ন করা হবে। এগুলো হচ্ছে ইউএমসি জুট মিলস, জাতীয় জুট মিলস এবং গলফ্রা হাবিব জুট মিলস (নন-জুট)।

বিজেএমসির আওতাধীন ২৭টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে একটি বন্ধ। কয়েকটি পরীক্ষামূলক চালু রয়েছে। তবে বেশিরভাগই লোকসানে চলছে। ২০১৪ সালে দেশের সবক’টি মিলের যন্ত্রাংশ আধুনিকায়ন ও উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিজেএমসির মিলগুলোকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে একটি প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট তৈরি করা হয়। এরপর একই বছরের আগস্টে চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে পাট কলগুলোর আধুনিকায়নের লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির আওতায় চীনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের পাট কলগুলো পরিদর্শন করে।

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, চীনের প্রতিনিধি দলটি আমিন জুট মিলস, করিম জুট মিলস এবং প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলে বিনিয়োগের জন্য চিহ্নিত করেছে, যা জি-টু-জি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। জানা গেছে,প্রতিনিধি দলটি এখনও বাংলাদেশের আরও কয়েকটি পাট কল পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে চীনের বিনিয়োগে চিহ্নিত মিলের নামও পরিবর্তন হতে পারে।

পাট কলের অভ্যন্তরে উদ্বৃত্ত জমিতে নতুন শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে বিজেএমসি। গেল বছর ডিসেম্বরে কমিটি এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। যেখানে বলা হয়, পাট কলের অভ্যন্তরে যে খালি জায়গা আছে, সেখানে পাট প্রক্রিয়াকৃত পণ্যের নতুন শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এজন্যই চিহ্নিত করা হয়েছে নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলের ১৪ একর জায়গা। রাজশাহীর রাজশাহী জুট মিলের ৬ একর জায়গা এবং কেএমটি জুট মিলের ৫ একর জায়গা। বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, এ ২৫ একর জায়গা ৫ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে লিজ প্রদান করা হবে। পাটসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এসব জায়গায় অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

দেশের পাট শিল্পের উন্নয়নের আগে বিলুপ্ত প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের মাধ্যমে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ওই সময় পাট কল বিক্রি ও বিক্রির পর পাট কল সম্পূর্ণ চালু না হওয়ায় কার্যকারিতা হারায় বেসরকারীকরণের প্রক্রিয়াটি। প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয় নারায়গঞ্জের নবারুণ জুট মিলস ২০০৫ সালে। মিলের অভ্যন্তরে ৪৫.৮৮ একর জায়গা থাকলেও মিলটি এখন আংশিক চালু রয়েছে বলে কমিশনের এক প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়। গাজীপুরের নিশাত জুট মিলস বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয় ২০০৩ সালে। সেটি এখন আংশিক চালু রয়েছে। বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া বাওয়া জুট মিলস এখন বন্ধ হয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে হস্তান্তর হওয়া ময়মনসিংহের ময়মনসিংহ জুট মিলস বর্তমানে আংশিক চালু রয়েছে। এ মিলের অভ্যন্তরে প্রায় ৪৫.৬১ একর জায়গা রয়েছে।

এছাড়া প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের মাধ্যমে সমীক্ষা চালানো হয় বিজেএমসির আওতাধীন রাজশাহী জুট মিলের। ওই সময় তাদের প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়, মিলটি বর্তমানে চালু রয়েছে। তবে লোকসানে রয়েছে। মিলটির দায়দেনার (চলতি, দীর্ঘমেয়াদি ও অন্যান্য) পরিমাণ বলা হয় ১৯৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সেক্রেটারি এম এ বারিক খান বলেন, বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন পাট কলগুলো সবসময়ই সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়ে থাকে। সে তুলনায় বেসরকারি পাট কলগুলোকে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকতে হয়। চীন আমাদের দেশের পাট কলগুলোর আধুনিকায়নের জন্য বিনিয়োগ করবে- এটি ভালো খবর। এতে আমাদের পাট কলগুলো আবার নতুন করে চালু হবে। এসব মিল চালু হলে কর্মসংস্থান বাড়বে। তিনি বলেন, পাট কলের উদ্বৃত্ত জমি লিজ প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে। একইসঙ্গে বেসরকারিভাবে অনেকেই পাটসংশ্লিষ্ট শিল্পের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের এসব জায়গা সহজশর্তে লিজ প্রদান করা হলে অন্য উদ্যোক্তারাও দেশের পাট শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হবেন।

এ বিষয়ে পাটের লড়াইয়ের উদ্যোক্তা নাসিমুল আহসান বলেন, দেশের পাট কলগুলোর প্রযুক্তি উন্নয়নের দাবি দীর্ঘদিনের। চায়নার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সেটি যদি সম্পূর্ণ হয়, তাহলে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও উন্নত হবে। আমাদের দেশের কাঁচা পাটের চাহিদা বাড়বে। উৎপাদন বাড়বে। উদ্বৃত্ত জমি লিজ দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!