• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি ছাড়তে হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশিদের


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৮, ২০১৭, ০৯:৪৯ পিএম
সৌদি ছাড়তে হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশিদের

ঢাকা: অবৈধ অধিবাসীদের বহিষ্কার করতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। এজন্য শুরু করেছে নতুন ইমিগ্রেশন আইন তৈরির প্রক্রিয়া। এতে বিপদে পড়বেন দেশটিতে থাকা প্রায় ৫০ লাখ অভিবাসী। যাদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশি।

দেশের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে নতুন এই উদ্যোগ নিচ্ছে সৌদি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। নতুন কিছু অভিবাসী আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে আইন প্রণয়ন করলে প্রায় ৫০ লাখ অভিবাসীর বিশাল এক অংশকে বহিষ্কার করা হতে পারে।

বাংলাদেশের শ্রমবাজারের অর্ধেকের বেশি সৌদি আরবে। দেশটি থেকে প্রবাসীরা গত অর্থ-বছরে (২০১৫-১৬) ২৩ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন। যা মোট প্রবাসী আয়ের ২০ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তৃতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র সৌদি আরব। তবে সৌদিতে ঠিক কতজন অবৈধ বাংলাদেশি বসবাস করছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই কোনো দেশের কাছেই। অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, সৌদিতে অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা দেশের মোট প্রবাসীর এক তৃতীয়াংশ।

সৌদি সরকারের অভিবাসী আইন প্রণয়নের ফলে অনিশ্চিত জীবনেরে দিকে ঠেলে দেয়া হতে পারে সেদেশে জীবিকার সন্ধানে যাওয়া অভিবাসীরা। কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করলে শুধু গৃহকর্মী হিসেবে নারীদের নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি সরকার। তবে তাতে সাড়া পাচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার।

অবৈধ অভিবাসন নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে একটি বিশেষ কমিশন গঠন করা যায় কি-না তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে দেশটির সর্বোচ্চ পরিষদ শুরা কাউন্সিল। এজন্য অবৈধভাবে সৌদি আরবে বসবাসকারীদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করেছে। শুরা কাউন্সিলের সদস্য ড. সাদকা ফাদেল সেই প্রতিবেদন কাউন্সিলে জমাও দিয়েছেন। সেখানে সৌদি আরবে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ফলে সৃষ্ট সমস্যা ও প্রতিকারের কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হজ, উমরা কিংবা ভিজিটর ভিসা নিয়ে অসংখ্য মানুষ সৌদি আরবে আসেন। এর মধ্যে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ সৌদি আরবে প্রবেশ করে আর নিজ দেশে ফিরে যান নি। পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে তারা রাজধানী রিয়াদ, জেদ্দা, মক্কা, মদিনা এবং তাইফের মত শহরে লুকিয়ে আছেন। সুবিধা অনুযায়ী কাজকর্ম করছেন। স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ বিয়েও করেছেন।

অধিকাংশই ঠাঁই নিয়েছেন তাদের পূর্বপরিচিতদের কাছে। অনেকে আবার প্রতারিত হয়ে অবৈধভাবে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাকে ফ্রি-ভিসা বলে আনা হলেও, প্রকৃতপক্ষে আনা হয়েছে ভিজিট ভিসায়। যাদের ধরা হয়, পাসপোর্ট হারিয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশকে। অভিবাসীদের মধ্যে বিশাল একটা অংশ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ার ঘটনা উদ্বিগ্ন করছে শুরা কাউন্সিলকে। সাম্প্রতি সৌদিতে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা এমন তথ্য পেয়েছেন।

শুরা কাউন্সিলের সদস্যরা এই সমস্যাটিকে সৌদির জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি বড় একটি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। সেজন্যই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। মানবিকতার জন্য যাদের কাগজপত্র ঠিক করা যাবে, তাদের বৈধভাবে থাকার অনুমতি দিতে পারে সৌদি আরব। যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তাদের বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়ার সুপারিশ করবে না শুরা কাউন্সিল।

নতুন অভিবাসন আইন নিয়ে দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলোতে নিয়মিত লেখা-লেখি হচ্ছে। কিন্তু ভাষাগত সমস্যার কারণে অনেক বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে পারছেন না প্রবাসীরা। তাই নতুন ইমিগ্রেশন আইন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীরা।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!