• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ হচ্ছে যে কারণে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মার্চ ৫, ২০১৭, ০৮:০৭ পিএম
সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ হচ্ছে যে কারণে

ঢাকা: আফ্রিকার ছোট্ট দেশ সোমালিয়া। কিছুটা প্রাকৃতিক হলেও দেশটিতে দুর্ভিক্ষের অধিকাংশই মানবসৃষ্ট। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই জাতি ও অঞ্চলগত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি। ফলে সরকার ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কোনো কাজ বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ত্রাণ নিয়ে বেশ কিছু অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারেনা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। আন্তর্জাতিক সংস্থার পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশটি এখনো স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে পারেনি। দাঙ্গা-হাঙ্গামা স্থানীয় জনগণের স্বাভাবিক আচরণে পরিণত হয়েছে। এমনকিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এখন পর্যন্ত। সামান্য কলেরায় হাজারো শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। জীবন মান উন্নয়ন ও শিক্ষার কোনো উদ্যোগ কাজে লাগতে পারেনি দেশটির সরকার। সে দেশের সেনাবাহিনী পর্যন্ত এই দ্বন্দ্বের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিরাপত্তার কারণে সব অঞ্চলে যেতে পারে না।

সর্বশেষ ২০১১ সালে সংগঠিত দুর্ভিক্ষে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা দেয়ার আগেই অর্ধেক মানুষের মৃত্যু হয়। যার অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু। বর্তমানে দেশটির প্রায় জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ বা ৩০ লাখ লোক খাদ্য নিরাপত্তায় ভুগছে।

দুর্ভিক্ষের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জাতিসংঘ দেখতে পায়, মূলত অভ্যন্তরীণ জাতিগত যুদ্ধে দেশটির নিরাপত্তা সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে এলাকায় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া সম্ভব হয়নি। অনেক অঞ্চলে ত্রাণ ও সাহায্য নিয়ে কর্মীদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। এসব কারণে সেই দুর্ভিক্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল।

১৯৯১ সাল থেকেই দেশটিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। দুর্ভিক্ষের অপর কারণটি হচ্ছে দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান। আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলে ‘এল নিনোর’ প্রভাব বিস্তার হয়ে সোমালিয়াতে। শুস্ক এ বায়ুর কারণে কয়েক বছর পর পরই খরা শুরু হয়। এল নিনো হচ্ছে বায়ুমণ্ডলীয় এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলোর মাঝে একটি পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে ৩ থেকে ৮ বছরের মধ্যে এটি দেখা যায়। এই সময়ে ভূ-উপরিস্থ পানি শুকিয়ে ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। এটি ‘এল নিনো দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যায়বৃত্ত পরিবর্তন’ নামেই বেশি পরিচিত।

মাত্র ৬৩৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে সোমালিয়ার জনসংখ্যা হচ্ছে এক কোটি ৫ লাখ। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দেশটিকে আফ্রিকা মহাদেশের শিং বলা হয়। এবছর নতুন করে দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে সেখানে। কয়েকটি অঞ্চলে খাদ্য ও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন করে ১০ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়ায় সেই সংখ্যা এখন ৬২ লাখে দাঁড়িয়েছে। এই সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। এরইমধ্যে খাদ্য সংকটে ১১০ জনের প্রাণ হানি হয়েছে।

সোমালিয়ায় কার্যরত জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নইলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। আগামী ছয় মাসের মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে দুর্ভিক্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ হতে পারে বলে পূর্বাভাস এমন কথা জানিয়েছে। ভূ-অবস্থানগত প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের কারণে এই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশটি। মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে।

বর্তমানে দেশটিতে মানব বিপর্যয় শুরু হয়ে গিয়েছে। সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্দুলাহি ফারমাজো এই খরাকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে গত ছয় বছরের মধ্যে দেশটি দ্বিতীয়বারের মতো দুর্ভিক্ষের শিকার হতে চলেছে।

অবশ্য জাতিসংঘ চারটি দেশকে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান ও ইয়েমেন।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!