• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে হঠাৎ পরিবর্তন, ব্যাংকপাড়ায় শঙ্কা


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নভেম্বর ২, ২০১৭, ০৯:৪৫ এএম
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে হঠাৎ পরিবর্তন, ব্যাংকপাড়ায়  শঙ্কা

ঢাকা: বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) শীর্ষ পদে বড় পরিবর্তন হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর রেজাউল হক, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুল হক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শহীদ হোসেন।

পদত্যাগের বিষয়টি সামনে আনা হলেও নেপথ্যে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে বলে মনে করছেন ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা।

ফলে ব্যাংকটিতে একটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকেও। এসআইবিএল এ এমন পরিবর্তন হওয়ায় অজানা শঙ্কা বিরাজ করছে মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায়। বাংলাদেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকেও চলছে দিনভর আলোচনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এভাবে আইনের উদ্দেশ্যকে অসৎ পথে পরিচালিত করলে ব্যাংকিং খাত ঝুঁকিতে পড়বে।

অপরদিকে ব্যাংকাররা বলছেন, নিয়ম না মেনে পরিবর্তন আনলে মেধাবী ও সৎ এমডি, চেয়ারম্যান ও দক্ষ ব্যাংককর্মী গড়ে উঠবে না। চাকরির নিরাপত্তা না পেলে ব্যাংক কর্মীরাও দুর্নীতিতে উৎসাহী হবে। ফলে ভেঙে পড়বে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা। যা দেশের সামষ্টিক আর্থিক খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে।

ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও হতাশা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

সূত্র জানিয়েছে, এভাবে নাটকীয় ও অদৃশ্য হাত নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে লাভে থাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে। ইতিমধ্যে ওই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে একে একে সাতটি ব্যাংক চলে গিয়েছে। সবগুলোই ইসলামী ব্যাংক। বিষয়টি রহস্যজনক ও ব্যাংক খাতের জন্য হুমকি স্বরুপ হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুই বলছে না দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যাংকার, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজ।

তাদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে অর্থের দিক দিয়ে শক্তিশালী অন্যান্য গ্রুপগুলো ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে উৎসাহী হবে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ভেঙে পড়বে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্ম হবে। বিষয়টি রাজনৈতিক ও আর্থিক উভয় দিক দিয়েই দেখতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ অক্টোবর রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ ওয়েস্টিন হোটেলে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে এক সভা করে এসআইবিএল। ওই সভায় নতুন পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ। আর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি কাজী ওসমান আলী। নির্বাহী কমিটির নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ।

যেভাবে পরিবর্তন-
চলতি বছরের শুরুর দিকে এসআইবিএল ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র মতে, দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ইউনাইটেড গ্রুপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটির প্রায় ৩১ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছিল। শেয়ারধারণ করে নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা পরিষদে একাধিক সদস্য মনোনীত করে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব তাদের হাতে নেয়া।

কোনো এক কারণে তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হচ্ছিল না। এ কারেণে দীর্ঘ দিন ধরে অভিহিত মূল্যের (প্রতি শেয়ার ১০ টাকা) ঘরে থাকা ব্যাংকটির শেয়ারের দাম গত জানুয়ারি মাসে ১৬ টাকায় উঠে। পরবর্তীতে বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ ৩৩.৭০ টাকায় বিক্রি হয় প্রতি শেয়ার। শেয়ার দাম বৃদ্ধির পরে সবগুলো শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে গ্রুপটি।

ব্লক মার্কেট থেকে ওই শেয়ার কিনে নেয় এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২০ প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বাইরে থেকেও তারা শেয়ার কেনে। যে প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে শেয়ার কেনা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন, লিয়ন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, পোর্টমেন্ট সিমেন্ট, মডার্ন প্রোপার্টিজ, প্রাসাদ প্যারাডাইজ রিসোর্ট, ইউনিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, হাসান আবাসন, প্লাটিনাম এনডোভার্স, ডায়নামিক ভেঞ্চার, রিলায়েবল এন্টারপ্রাইজ, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, লিডার বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, পুষ্টি ভেজিটেবল ঘি, ইউনিটেক্স স্টিল মিলস ও ইউনিটেক্স সিমেন্ট লিমিটেড। ঢাকার দিলকুশার আলআমিন সেন্টার ও চট্টগ্রামের এস আলম ভবনের ঠিকানা ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

ব্যাংকের বর্তমান অবস্থায় ফের নামতে শুরু করেছে ব্যাংকটির শেয়ার দর। সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৭ টাকায় প্রতি শেয়ার।

১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা এসআইবিএলের বর্তমান শাখা রয়েছে ১৩৫টি। ব্যাংকটিতে ১২ হাজার কোটি টাকা আমানত রয়েছে। ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এখন এর শেয়ারধারীর সংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজার।

ব্যাংকটিতে গত ১০ মাসের ব্যবধানে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বেড়ে ৩৩.৭৬ শতাংশ থেকে হয়েছে ৩৪.৪০ শতাংশ।  প্রাতিষ্টানিক শেয়ারহোল্ডারদের ৩৩.৩৭ শতাংশ থেকে ৪৯.৫৮ শতাংশ, বিদেশিদের ০.৪৮ শতাংশ থেকে ১.৪৩ শাতাংশ শেয়ার বেড়েছে। অপরদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৩২.৩৯ শতাংশ থেকে কমে সর্বশেষ দাঁড়িয়েছে ১৪.৫৯ শতাংশে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব/আকন

Wordbridge School
Link copied!