• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি মূল্যে কুয়েতে ওষুধ রপ্তানি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৯, ২০১৬, ০৩:৩৭ পিএম
স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি মূল্যে কুয়েতে ওষুধ রপ্তানি

জিসিসি বা গালফ অঞ্চলের কোনো দেশে প্রথমবারের মতো ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। দেশীয় বাজারের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি দামে কুয়েতে ওষুধ রপ্তানির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ওই অঞ্চলে রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড’।

প্রাথমিকভাবে অ্যাজমা রোগের প্রতিষেধক অ্যাজমাসল ও বেক্সিট্রল এফ এবং ব্লাড প্রেসারের এমডোকালের প্রতিটি ৬০০০ ইউনিট পাঠানো হচ্ছে। বেক্সিমকোর টঙ্গী কারখানায় গত সপ্তাহে এই ওষুধ রপ্তানির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আদেল মোহাম্মদ এ এইচ হায়াত।

সে সময় বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, কুয়েতে ওষুধ রপ্তানির মাধ্যমে গালফ বা জিসিসি অঞ্চলের কোনো দেশে ওষুধ রপ্তানি প্রথম ঘটনা বাংলাদেশের জন্য। দেশের বাজারের তুলনায় কুয়েতে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি দরে কুয়েতে ওষুধ রপ্তানি করা হবে। আবার কুয়েত অন্য যেসব দেশ থেকে আমদানি করে সে তুলনায় দাম অনেক কম।

এর ফলে কুয়েতে ওষুধের মার্কেট ধরা সহজ হবে। রপ্তানিকারক ও অর্থনীতির গবেষকরা বলছেন, কুয়েতের বাজারে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি এ খাতে আয় বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। এদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্র জানা গেছে, দেশে ২৫৭টি নিবন্ধিত কোম্পানির মধ্যে ১৯৪টি ওষুধ উৎপাদন করছে। তবে মোট ওষুধের ৪৫ শতাংশ উৎপাদন করে শীর্ষস্থানীয় ১০টি কোম্পানি।

এছাড়াও বিদেশ থেকে প্রযুক্তি ও কাঁচামাল এনে বাংলাদেশে তৈরি বা বাজারজাতকৃত জেনেরিক ওষুধের (অ্যালোপ্যাথিক, ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক) সংখ্যা প্রায় ১২০০। প্রায় ৯০০টি প্রতিষ্ঠান ২৫ হাজারেও ওপরে ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করে এ ওষুধগুলো তৈরি করছে। এর মধ্যে এলোপ্যাথিক ওষুধের ব্র্যান্ড হচ্ছে সাড়ে ২০ হাজার। এর পাশাপাশি ২৬৮টি ইউনানি, ২০১টি আয়ুর্বেদিক, ৯টি হারবাল এবং ৭৯টি হোমিওপ্যাথিক ও বায়োকেমিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বর্তমানে ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের ৯০টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। পৃথিবীর অনুন্নত ৪৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে এক হাজার ৬০৮ কোটি ৪০ লাখ (১৬ দশমিক ০৮ বিলিয়ন) ডলার।

এর মধ্যে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলার (প্রায় ৩০০ কোটি টাকা) এসেছে ওষুধ রপ্তানি থেকে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। এর আগে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৪ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪ কোটি ৬৮ লাখ এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়।

দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতি বছরই বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ থেকে ওষুধের রপ্তানি বেড়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) গত বছর নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর ফলে বাংলাদেশ আরও সতেরো বছর মেধাস্বত্বের জন্য কোনো ব্যয় না করেই ওষুধ তৈরি ও কেনা-বেচা করতে পারবে।

ক্যান্সার, আর্থ্রাটিস, অ্যাজমাসহ অনেক জটিল রোগের ওষুধও দেশের মানুষ কম মূল্যে পাবে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সূত্রে জানা গেছে, যে ইনজেকশনের দাম বিদেশে ৩ লাখ টাকা, এলডিসির জন্য দেওয়া সুবিধায় বাংলাদেশের একটি কোম্পানি তা ৬০ হাজার টাকায় দিতে পারে। এই সুযোগ ঠিকমতো কাজে লাগানো গেলে বিদেশ থেকেও রোগীরা বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!